Wednesday 24 December 2014

ভিনদেশী তারাদের দেশে Vindeshi tarader deshe

--- টিং ডি টিং......... হ্যাপি বার্থডে আমার সুইটু মুইটু অরোরা। দেখো মামনি তোমার জন্য মা কি বানিয়ে এনেছে!
--- কই দেখি দেখি? কেক! থ্যাঙ্কু ম্যাঙ্কু মা। তুমি বেসটু মা।
--- হুম হুম হয়েছে। আর আহ্লাদ করতে হবে না, আয় কেকটা কাটি।
মা-মেয়ে দুইজনে মিলে কেকটা কাটল। তারপর দুইজন মিলে কেক খাওয়ার চেয়ে মাখামাখি করলো বেশি। সেই ছোট থেকেই অরোরার সাথে মায়ের এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। বাইরে থেকে সারাদিনের হৈ হুল্লোড় শুনলে মনেই হবে না দুই রুমের এই বাসায় মানুষ বলতে শুধু এই দুইজন। অরোরা আর তার মা কথা। অরোরার বাবা ক্যান্সারে মারা গেছে অরোরার জন্মের আগেই।
মা-মেয়ের জীবনে এই একটাই বড় দুঃখ। এছাড়া দুজনেই সারাক্ষণ আনন্দে মেতে থাকে। কথা অবশ্য মাঝে মাঝে বড্ড বিমর্ষ হয়ে পড়ে যখন অরোরা স্কুলে থাকে। তখন সারা ঘরময় কেমন এক ধরনের শুন্যতা অনুভব করে কথা, এই সময়টাতেই কাব্য’র কথা খুব বেশি মনে পড়ে ওর। তবুও নিজেকে সামলে সবসময় হাসিখুসি থাকার চেষ্টা করে কথা, শুধুমাত্র অরোরার জন্য। এভাবেই একটু একটু করে বড় করে তুলেছে সে অরোরাকে, কখনও ক্ষণিক সময়ের জন্যও বাবার অভাব বুঝতে দেয়নি। অরোরাও বুঝতে পারে বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে মা’র কষ্ট হয় তাই খুব প্রয়োজন না হলে অরোরা কখনও বাবার কথা জিজ্ঞেস করে না। একটু একটু করে বড় হতে হতে এখন অনেকখানি বড় হয়ে গেছে অরোরা। আজ তার ১৩ তম জন্মদিন।

--- মা অল্প একটু কেক রেখে দেই? কালকে স্কুলে নিয়ে যাবো। বান্ধবীদের খাওয়াতে হবে তো।

--- ঠিক আছে যা রেখে দে। তুই ই তো সব মাখামাখি করে নষ্ট করছিস।

--- আচ্ছা মা তুমি কি কিছু ভুলে যাচ্ছ?

--- হাহাহা না মনে আছে। তোর গিফট তো? তোর ড্রয়ার খুলে দেখ তোর পছন্দ করা জামাটা রাখা আছে।

--- মা সত্যি ই কি তুমি ভুলে গেছ?

--- আচ্ছা হেয়ালি রেখে ঠিক করে বলতো তুই কিসের কথা বলছিস?

--- না মানে.........বাবার গিফট টা?

হঠাৎ করেই কথার মুখটা মলিন হয়ে গেল। ঝড়ে পড়ার আগে ফুল যেমন ফ্যকাসে হয়ে পড়ে ঠিক তেমন ফ্যকাসে দেখাচ্ছে তার মুখখানা। কথা ভাবে, হ্যাঁ তাই তো আজ ই তো সেই দিন। আজ ই তো অরোরার ১৩ তম জন্মদিন। মেয়ের জন্য বাবার রেখে যাওয়া উপহারটা দীর্ঘ ১৩ টি বছর নিজের কাছে যত্ন করে রেখে দিয়েছে কথা। ১৩ বছর অনেক দীর্ঘ সময়। তাই যে মেয়েটি সেই ছোট থেকে কখনও বাবার আদর পায়নি, অল্প সময়ের জন্য বাবার স্পর্শ পায়নি সে মেয়ের কাছে বাবার দেওয়া গিফট এর মুল্য কতখানি তা অরোরা বুঝে। আর বুঝে বলেই সে প্রতিটি ক্ষণ অপেক্ষা করেছে আজকের দিনটির জন্য। আজ অরোরার অপেক্ষার অবসানের দিন। তাই কথা ভুলক্রমে ভুলে গেলেও অরোরা ভুলে যায়নি আজকের দিনটিকে।

--- মা আমি স্যরি। তুমি কি খুব কষ্ট পেয়েছ? আসলে আমি............( অরোরাকে থামিয়ে দেয় কথা )

--- যা হাতমুখ পরিস্কার করে আয় আমি বের করে দিচ্ছি।

অরোরা লক্ষ্মী মেয়ের মতো হাতমুখ পরিস্কার করতে চলে গেলো। কথা নিজের পার্সোনাল ড্রয়ারে হাত দিল। ওর হাতটা খুব কাঁপছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত হিমভাব একমুহূর্তেই এসে জড় হয়েছে ওর হাতটিতে। কাঁপা কাঁপা হাতে ড্রয়ার খুলে কাব্য’র ডায়েরীটা বের করলো কথা। খুব বেশি মন খারাপ না হলে কিংবা একাকীত্ব বোধ না হলে ডায়েরীটা সে খুলে না। কারণ ডায়েরীর প্রতিটি পাতা পুরনো স্মৃতি হয়ে আপনাআপনি চোখের সামনে ভাসতে থাকে ওর। অরোরার সামনে সে কখনও ভেঙ্গে পড়ে না তাই আজ ইচ্ছাকৃতভাবে ডায়েরীর লেখাগুলোকে উপেক্ষা করে, কথা পৃষ্ঠার ভাজ থেকে বের করে নেয় নীল খামটি। যেখানে আছে যত্ন করে লেখা একটি চিঠি আর একটি সিডি। অরোরার প্রতি জন্মদিনেই কথা লুকিয়ে এই নীল খামটি বের করে উল্টেপাল্টে দেখে আর খুব সচেতনে কয়েক ফোঁটা চোখের জল ফেলে পাছে অরোরা দেখতে না পায়। খামটা হাতে নিয়ে কয়েক মুহূর্তের জন্য অতীতে চলে যায় কথা।

কাব্যর সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত ছিল সুখের এক একটি যুগ। কখনও এক মুহূর্তের জন্যও তাদের ভালবাসায় ভাটা পরেনি। দুজনে দুজনকে ভালোমতো বুঝতে পারার এক অসীম ক্ষমতা ছিল ওদের মাঝে। কাব্য আর কথা দুজনেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। সেই থেকে বন্ধুত্ব তারপর কাছে আসা অতঃপর ভালবাসা। এরপর দীর্ঘ ৩ বছরের প্রেম আর তারপর বিয়ে। খুব ভালো গাইতে পারতো কাব্য। এই ছোট্ট বাসার ব্যাল্কনিতেই কত রাত পার করে দিয়েছে দুজনে। বৃষ্টি খুব প্রিয় ছিল ওদের দুজনের। এমন কোন বৃষ্টির রাত ছিল না যখন কাব্য আর কথা দুজনেই গিটার আর গানকে সঙ্গী করে সারারাত কাটিয়ে দিয়েছে। সুখ আর ভালবাসার কোন অভাব ছিল না দুজনের ছোট্ট সংসারটিতে। কিন্তু এত সুখ বোধয় তাদের কপালে লেখা ছিল না। দুজনেই যখন তাদের প্রথম সন্তানের এই পৃথিবীতে আসার আনন্দে মশগুল ঠিক তখনি একদিন মাথা ঘুরিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় কাব্য। ল্যাব টেস্ট করলে ধরা পড়ে ওর ক্যান্সার হয়েছে। ডাক্তার সময়সীমা বেঁধে দেন তিন মাস। দুজনের সুখের পৃথিবী থেকে সুখগুলো হঠাৎই যেন কর্পূরের মতো উবে যায়। প্রথম প্রথম দুজনেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদত। পরে কাব্য নিজেকে সামলে নিয়েছে কথা আর আগত বাচ্চার কথা ভেবে। চলে যাওয়ার আগে খুব আবেগ দিয়ে একটি চিঠি লিখেছিল কাব্য। ততদিনে সে জেনেছিল তার প্রিয়তমার কোলজুড়ে আসবে এক রাজকন্যা। সেই রাজকন্যার জন্য কাব্য একটি একটি গান লিখেছিল আর সেটাকে রেকর্ড করে রেখে দিয়েছিলো সিডিতে। তারপর চিঠি আর সিডিটি রেখে দিয়েছিলো একটি নীল খামে আর কথাকে বলেছিল,

--- যেদিন আমাদের মেয়ে অনেক বড় হবে, বুঝতে শিখবে সবকিছু কেবল সেদিনই এই নীল খামটি তাকে দিও। অবশ্যই কোন এক জন্মদিনে আমার রেখে যাওয়া উপহার হিসেবে। আমার মনে হয় ১২-১৩ বছর ঠিক সময়, ততদিনে আমাদের রাজকন্যা সবকিছু বুঝতে শিখে যাবে।

--- কথা কিছুই বলল না। শুধু একরাশ অভিমান ভরা চোখ নিয়ে খামটা হাতে করে ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখলো।

অরোরা খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসলো। অরোরাকে আসতে দেখে কথা খুব দ্রুত চোখের জল মুছে নিলো। তারপর অরোরার হাতে নীল খামটি দিয়ে হেঁটে গিয়ে ব্যাল্কনিতে দাঁড়ালো।

অরোরার হাতে বহু আকাঙ্খিত সেই উপহার। ওর বাবার দেওয়া একমাত্র উপহার। কাঁপা কাঁপা হাতে অরোরা খাম খুলে দেখতে পেলো একটি চিঠি আর সিডি। চিঠি খুলে পড়ার আগে পরম মমতায় সেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরলো অরোরা। তারপর চিঠি খুলে, লেখা অক্ষরগুলো থেকে ঘ্রাণ নিতে থাকলো বারবার। ওর মনে হতে লাগলো বাবা ওর খুব কাছে আছে, চিঠির লেখাগুলো হয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে ওর অধর। এভাবেই বেশ খানিকক্ষণ বসে থাকলো অরোরা। তারপর আসতে আসতে চিঠি পড়তে শুরু করলো।


প্রিয় রাজকন্যা,

                 প্রথমেই বলে দিচ্ছি চিঠি পড়া শেষ করে কিন্তু কাঁদতে পারবি না। তাহলে কিন্তু বাবা খুব রাগ করবো। আমার রাজকন্যার চোখে যেন একটুও পানি না আসে। তোর এই বাবাটা কিন্তু রাজা না, তবুও তুই আমার কাছে রাজকন্যা। আর আমার রাজকন্যার চোখে জল আমি কিছুতেই মেনে নেব না। তুই ভাবছিস এতই যদি আমায় ভালোবাসো তাহলে কেন এই গিফট এর জন্য আমায় এত বছর অপেক্ষা করালে, তাই না? কি করবো বল? এখনই তো সঠিক সময়। তুই অনেক বড় হয়েছিস। এখন তুই বুঝতে পারিস আবেগ, মমতা, ভালবাসা এসব ছোট ছোট শব্দে মিশে থাকা বড় বড় অনুভূতিগুলোকে। তোর ছোট মাথায় এত বড় বড় সব অনুভূতি চাপিয়ে দিতে চাইনি বলেই তোর মাকে বলেছি তুই বড় হওয়া পর্যন্ত যেন অপেক্ষা করে। এখন আর বাবা’র উপর রাগ করে থাকিস না। একটুখানি হেসে দাঁতগুলো দেখা দেখি।

আমি নিশ্চিত তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস, গোলগাল চেহারা, বড় বড় চোখ আর লম্বা চুল হয়েছে তোর, ঠিক তোর মা’র মতো। বাবা’র মতো নিশ্চয় খুব খুনসুটি করিস মা’র সাথে? জানিস তোর মা আর আমি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। আর তারপর ৩ বছর প্রেম করে বিয়ে করেছি। সেই থেকে তোর মা’কে ভীষণ জ্বালিয়েছি আমি। তোর মা’ও অবশ্য খুনসুটিতে কম যায় না। তুই হচ্ছিস সৃষ্টিকর্তার দেওয়া আমাদের সবচেয়ে প্রিয় উপহার। যেদিন প্রথম তোর আসার খবর পাই সেদিন কতো আয়োজন! না বললে তুই বিশ্বাসই করতে পারবি না। দুই পরিবারের খাওয়া-দাওয়া, তোর মাকে নিয়ে শপিং আরও কতো কি! এরপর থেকে তো যতবারই আমি আর তোর মা শপিং এ গিয়েছি তোর জন্য কিছু না কিছু কিনে এনেছি। প্রথম কয়েক মাস পুরো আনন্দের ঘোরে কেটেছে। ঘোরটা ভাঙ্গল তখনই যখন আমার রোগটা ধরা পড়ল। তোর মা খুব বেশি ভেঙ্গে পড়েছিল। তারপর থেকে তো যাওয়ার দিনগোনা শুরু। এই না, একদম না, একদম মন খারাপ করবি না। এই যে আমি কিন্তু মোটেও মন খারাপ করে লিখছি না এগুলো সুতরাং তুইও একদম মন খারাপ করবি না।

তারপর কি হল শোন, যেদিন জানলাম আমাদের ঘরে রাজকন্যা আসছে সেদিন যে কি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম তোকে বুঝাতে পারবো না। কারণ তোর আর আমার মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল আমাদের প্রথম সন্তান হবে মেয়ে। তাই তোর আসার খবরটা আমার কাছে ইচ্ছেপুরনের মতই মনে হল। এরপর কতো রাত তোর নাম ঠিক করা নিয়ে তোর মায়ের সাথে ঝগড়া করেছি হিসেব নেই। শেষ পর্যন্ত “অরোরা” নামটি ঠিক হয়েছিল। আমি জানি তোর মা আজ পর্যন্ত কখনও এসব কথা তোকে বলেনি। আসলে তোর মা ভীষণ আবেগি। তোর সামনে নিজেকে সামলাতে পারবে না বলেই হয়তো তোকে কখনও এই কথাগুলো বলেনি। তাই আমি ই তোকে সবকিছু জানিয়ে দিচ্ছি। তুই তো এখন বড় গেছিস। তোর মা’র খেয়াল রাখিস। কখনও কষ্ট দিস না। এই বড় দায়িত্বটা এখন তোর। আমি জানি তুই মনে মনে বলছিস তুমি কেন থেকে গেলে না? তাহলে আর আমাকে এত বড় দায়িত্ব নিতে হত না। কি করবো বল মা? কোনোকিছুই তো আমার অধিনে নেই। থাকলে হয়তো তোদের সাথেই থেকে যেতাম।

তোকে একটাবারের মতো দেখতে পারবো কিনা জানা নেই। এই চিঠি যখন লিখছি তখন ডাক্তারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মাত্র এক সপ্তাহ বাকী আর তোর আসতে এখনও এক মাস বাকী। তোকে দেখে যাওয়াটাই এখন শেষ ইচ্ছা। জানি না এই ইচ্ছে পূরণ হবে কিনা? পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস মামনি। তোকে পৃথিবীর সকল আনন্দ দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। শৈশবে বাবা ছাড়া থাকার কষ্ট আমি বুঝি। প্লিজ আমার উপর রাগ করিস না। সত্যি বলছি আমার তোকে ছেড়ে যাওয়ার এতোটুকুও ইচ্ছে নেই। কিন্তু কি করবো বল? প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা আমাকে বাধ্য করছে যেতে। তোর চাঁদপানা মুখটা দেখারও সময় দিচ্ছে না আমাকে।

আমি জানি তোর মা তোকে ডাবল ডাবল ভালবাসা, আদর দিবে। সর্বচ্চ চেষ্টা করবে আমার অভাব বুঝতে না দেওয়ার। তবুও কখনও যদি মন কেমন করে আমার জন্য তাহলে খবরদার ভুলেও তোর মা’র মতো ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদবি না। সাহসী মেয়েরা কাঁদে না আর আমি জানি আমার রাজকন্যা অনেক সাহসী। মন খারাপ হলে চুপটি করে ব্যাল্কনিতে গিয়ে কোনায় রাখা ইজি চেয়ারটায় বসবি ওটা আমার খুব প্রিয় জায়গা ছিল। ইজি চেয়ারটায় বসে রাতের আকাশে এমন তারা খুঁজে বের করবি যেটা এক কোণে চুপটি করে আপনমনে জ্বলছে। বুঝবি ঐ তারার দেশ থেকেই আমি তোকে দেখছি।

তোর এই বাবাটা একটু আধটু গাইতেও পারে জানিসতো? নাকি মা তোকে এটাও বলেনি। অনেক ভেবেছি বুঝলি, কি এমন রেখে যাওয়া যায় যার মাঝে তুই আমাকে অনুভব করতে পারবি। অনেক ভেবে এই উপায়টা বের করলাম। আমার গলায় গাওয়া একটি গান রেকর্ড করে রেখে যাচ্ছি সিডিতে। শুনে মনে মনে আমাকে জানিয়ে দিসতো কেমন হয়েছে। এই গানটা শুধুই তোর জন্য লেখা,


ভিনদেশী তারাদের দেশে

যদি কোনোদিন হঠাৎ আমায় পড়ে মনে,

রাতজাগা ঐ ভিনদেশী তারাদের পাণে চেয়ে;

আকাশপাণে এমন তারা খুঁজবে কোথায় আছে?

চুপটি করে একটা কোণে আপনমনে জ্বলছে।

জানবে আমি বসে আছি ঐ তারাটির দেশে,

দিচ্ছি আলো,গাইছি গান শুধুই তোমার জন্যে।

ঘুমন্ত শহরে শুধু তোমায় শোনাব এই গান,

ফুরিয়ে যাওয়া হাসিগুলো ফিরে পাবে নতুন প্রাণ।

নিয়ে যাবো তোমাকে এক স্বপ্নের জগতে,

মুছে যাবে আমার শুন্যতা তোমার হাসিতে।

ছলছলে দুচোখের অভিমান মুছে দিয়ে,

স্বপ্নের গান ঘুম নামাবে তোমার দুচোখে।

কোনো এক সকালে ঘুম ভেঙ্গে আড়মোড়ে,

দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি চিলেকোঠার পরে।

আর লিখতে পারছি না মামনি। একটু একটু কষ্ট হচ্ছে। ভালো থাকিস মামনি, অনেক অনেক ভালো থাকিস। তোর মা’র খেয়াল রাখিস আর নিজের শরীরের যত্ন নিস। আবারও বলছি, মনে রাখিস রাজকন্যারা কিন্তু অনেক সাহসী হয়, তারা কখনও কাঁদে না। আর তুই হলি আমার রাজকন্যা।

অরোরা খাম থেকে সিডিটা বের করে সিডি প্লেয়ারে ঢুকিয়ে চালিয়ে দিল। তারপর এক দৌড়ে ব্যাল্কনিতে চলে গেল। কথা তখনও দাঁড়িয়ে আছে ব্যাল্কনিতে। অরোরা গিয়ে জড়িয়ে ধরল ওর মা’কে। সারা ঘরময় বেজে চলেছে কাব্য’র গেয়ে যাওয়া শেষ গানটা।

--- মা জানো বাবা চিঠিতে লিখেছে, রাজকন্যারা অনেক সাহসী হয়, তারা কখনও কাঁদে না। আর আমি নাকি বাবার রাজকন্যা। কিন্তু আমার চোখে না একটা পোকা পড়েছে তাই জল বেড়িয়ে গেছে না চাইতেও। তুমি একটু মুছে দেবে মা?

--- হুম আমার চোখেও একটা পোকা পড়েছে। আমার চোখটাও মুছতে হবে।

মা-মেয়ে দুজনে দুজনের চোখ মুছে দিল। কোনায় রাখা ইজি চেয়ারটা বাতাসে আপনমনে দুলছে। আর ওরা দুজন ঝাপসা চোখে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে, রাতজাগা ঐ ভিনদেশী তারাদের পাণে।