Wednesday 18 February 2015

বুদ্ধিই বল

একদা এক মহিলা ছিল। সে একদিন তার ছেলেদের নিয়ে বাপের বাড়িতে যাচ্ছিল। তার পাপের বাড়ী
যাবার পথে গভির জঙ্গল পড়ে। আর সেই জঙ্গলে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ, কত রকমের প্রানী। তারা চলছে আর চলছে। চলতে চলতে দুপুর গড়িয়ে গেল। এমন সময় একটা বাঘ হেলতে দুলতে তাদের দিকে এগিয়ে এলো।
মহিলা ভাবল এ বাঘের হাত থেকে তাদের আর রেহাই নেই। মানুষের গন্ধ পেয়েছে বাঘ, তাইতো রক্তের লোভে এগিয়ে আসছে।

মহিলা মনে মনে সাহস সঞ্চয় করল। নাঃ বাঘের গায়ের জোর থাকতে পারে, কিন্তু আমি বুদ্ধি দিয়ে লড়াই করে একবার শেষ চেষ্টা করবো। কারন বাঘের থেকে পালিয়ে বাঁচা যাবে না।
মহিলা মনে মনে স্থির করলো বুদ্ধি প্রয়োগ  কিভাবে করবে। হঠাৎ মহিলা ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে বাঘটাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগল - কাঁদিস না রে তোরা কাঁদিস না। ঐ তো একটা বাঘ এসে গেছে। ওটাকে আজকে খা। মনে হচ্ছে এ বনে আরও বাঘ আছে। কাল আবার মেরে আনবো। বাঘের মাংস খাবার বায়না করছিলি ক'দিন ধরে। এবার বাঘের মাংস খেতে পাবি।
এসব কথা শুনে বাঘটার তো পিলে চমকে গেল। মানুষ যে বাঘের মাংস খায় তা সে জানতো না। ভয় পেয়ে বাঘ পিছন ফিরে দিলো ছুট।
মহিলা তার ছেলেমেয়েদের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কোলের কাছে টেনে নিয়ে বসে পড়ল - যাক, এ যাত্রা তো সকলে বাঁচল!
ওদিকে বাঘটাকে ছুটতে দেখে এক শিয়াল অবাক হয়ে জিঞ্জেস করল - কি হয়েছে বাঘ মামা, অত ছুটছ কেন? কি হয়েছে?
বাঘ বলে - কি আর হয়েছে ভাগ্নে - প্রানের দায়ে ছুটছি।
শিয়াল আরো অবাক হয়ে বলে - কি হয়েছে মামা, একটু খুলে বলো। তোমার কিসের ভয়?
বাঘ হাঁপ ছেড়ে একটু দম নিয়ে বলল - এক ডাইনি এসেছে বনে। সে বাঘ মেরে খায়! সঙ্গে আবার দু-দুটো বাচ্চা।
শিয়াল হো হো করে হেসে উঠল। বলল - তোমার মাথা খারাপ হয়েছে মামা। একটা মেয়ে মানুষকে তোমার এতো ভয়। চল দেখছি আমি।
বাঘ জানে শিয়াল ধূর্ত। বলল - বুঝেছি আমাকে তার সামনে ছেড়ে দিয়ে কেটে পড়বে। খুব মজা হবে না ? পরে ফিরে গিয়ে নিজেও বাঘের মাংস একটু ভাগ পাবে, তাই না? আমি তোমাকে বিলক্ষন চিনি।
শিয়াল বলল - এতই যদি তোমার সন্দেহ হয়, তবে এক কাজ কর  - আমাকে তোমার গলার সঙ্গে বেঁধে নাও। তাহলে তো আর পালাতে পারবো না।
বাঘ রাজি হয়ে গেল। মানুষগুলোকে সেই খাবে । মানুষ খেতে দারুন লাগে। মহিলা ছেলে দু'টিকে নিয়ে একটি গাছের তলায় বসে বসে ভাবছিল কি করা যায়। সে আর এগোতে সাহস পাচ্ছিল না। হটাৎ দেখে বাঘ ফিরে আসছে গলায় একটা শিয়াল বাঁধা অবস্থায় ঝুলছে। মহিলা একটু ঘাবড়ে গেলো বটে কিন্তু তক্ষনাৎ বুদ্ধি এসে গেলো মাথায়। চিৎকার করে বলে উঠল - ও রে পাজী শেয়াল, আয় তুই আয়, মজা দেখাচ্ছি তোর! ছেলেমেয়েরা আমার বাঘের মাংস না হলে ভাত খেতে চায় না - কান্নাকাটি করছে, সেদিকে তোর খেয়াল নেই? রোজ তিনটে করে বাঘ এনে দেবার কথা ছিলো, মাত্র একটা বাঘ নিয়ে এতক্ষনে আসা হচ্ছে!
বাঘ বুঝলো শেয়াল চালাকি করে তাকে সেখানে নিয়ে এসেছে, সে আবার পেছল ফিরে প্রানপনে ছুটতে লাগল। শেয়াল যত মরে গেলাম, মরে গেলাম বলে চীৎকার করতে থাকে বাঘ তত জোরে ছুটতে থাকে।
মহিলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
নীতিকথা = গায়ের জোরের চেয়ে সুক্ষ্মবুদ্ধির বেশি প্রয়োজন।