Saturday 29 November 2014

শৈল্পী [ Shilpir Galpo ]

 (১)

"আর কদ্দিন রে শুভ্র? তোর মত একটা জিনিয়াস যদি........" হতাশার তোড়ে তৃপ্তির কথা আটকে যায়। শুভ্র হেসে ফেলে বান্ধবীর অবস্থা দেখে। তার সামনে একটা পোর্টেট। তৃপ্তির দিকে তা ফিরিয়ে বলে,"দেখতো এবার।"
"ওয়াও!!!" তৃপ্তি চেঁচিয়ে ওঠে হটাত! "এটা আমি? সত্যি আমি? আমি এত্ত মায়াবতী?"
"মিথ্যে মিথ্যে ফুটিয়ে তুললাম আর কি!"
খোঁচাটা এড়িয়ে তৃপ্তি বলল,"নিয়ে যাই? বাঁধিয়ে ঝুলিয়ে রাখব বসার ঘরে। পিক তুলে ফেবুতে ও দিব। লোকে ডাকবে,"তৃপ্তি দ্য মায়াবতী।" আহ ভাবতে ও আবেগাপ্লুত হয়ে যাচ্ছি। নিই?"

লেইম লাভার ( Misti Premer Galpo )

নীল আকাশের নিচে আমি রাস্তায় চলেছি একা- সেই আদি আমলের গানটা গাইতে গাইতে আপন মনে হাঁটছিলাম ! হঠাত্‍ বজ্রাহত হলাম !
না, ভুল ভাবছেন । ঢাকা শহরের অগণিত ম্যানহোল গুলোর মাঝে একটি আমাকে আপন ভেবে কাছে টেনে নেয় নি ! আপন মনে হাঁটলেও আমি যথেষ্ট সতর্ক ভাবেই হাঁটি ।
স্তম্ভিত হলাম কারণ ছোটকাল থেকে যেরকম রাজকুমারীর ছবি আমার মানসপটে লালন করে এসেছি ঠিক তার এক বাস্তবরূপই রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে । চোখে মুখে বিচলতি ভাব । কি যেন খুঁজছে !
"পাইলাম ! আমি ইহারে পাইলাম !!" চারপাশের এত লোকজন, গাড়ি-ঘোড়া, বিল্ডিং সব হঠাত্‍ অদৃশ্য হয়ে আমি নিজেকে অবারিত সবুজের মাঝে আবিস্কার করলাম !

Thursday 27 November 2014

ছায়াশরীরি মা

শাওনীর ডায়রি থেকে ::

আমরা মানুষরা ক্ষণস্থায়ী। এই আছি তো, এই নাই! কেও মারা গেলে ধীরে ধীরে তার স্মৃতিটুকু ও মুছে যায়। অথচ মৃত মানুষটাকিন্তু পুরোপুরি হারিয়ে যায়না ! কোথাও না কোথাও থেকে যায়। হয়ত অন্য কোনরূপে, কিংবা অন্য কোন মাত্রায় ! কোন এক অতৃপ্ত আশা পূরণের অপেক্ষায়..মৃত্যুর পরে আরেক জীবন আছে, আমরা জানি। আর আমি জানি, সবচাইতে আপন, প্রিয়মানুষগুলোর দ্বিতীয় জীবন হচ্ছে আমাদের অনুভূতি। তারা আমাদের অনুভূতিতে মিশে থাকে। আমাদের বিশ্বাস আর অস্তিত্বে মেশে থাকে। যার সাক্ষী আমি..!!! কিছুদিন আগের ঘটনাই ধরুন...

Wednesday 19 November 2014

যতসব ভৌতিকতা ( সম্পূর্ণ )

সকাল থেকেই আমি মজিদ ভাইকে একটা বিশেষ উদ্দেশ্য খুঁজছি। লোকটির খুব মাছ ধরার নেশা। রাত-দুপুরে এখানে সেখানে মাছ ধরতে যায়। আমি একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম ভাই আপনার ভয় করেনা? সে বত্রিশ দাঁত বের করে বললো ভূতের কথা বলছো। আমিতো ভূত চাবাইয়া খাই। কিছুটা দৃষ্টিকটু তার দাঁতের দিকে আমার নজর পরলো দেখলাম দাঁত থেকে রক্ত বের হচ্ছে। কথার মাঝ খানে ওয়াক থু। থুথুর সাথে কিছুটা রক্তও বের হয়েছে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। আমারও আবার মাছ ধরার খুব সখ। তাই মজিদ ভাইয়ের সাথে আমার প্রচুর খাতির।

শেষ রাতের ট্রেন ( রহস্য রোমাঞ্চ ভৌতিক গল্প )

"এই চা গরম -চা গরম " - চিকন একটা গলায় চিৎকার করে চলেছে মিশকালো একটা লোক- হাতে এক বিশাল চায়ের ফ্লাক্স- চিল্লাতে চিল্লাতে রাজু সাহেবের সামনে মিনিট তিনেক ধরে ঘুর ঘুর করছে। যত বার রাজু সাহেবের সামনে যাচ্ছে ততবার রাজু সাহেব বিরক্ত হচ্ছেন- কিন্তু চা ওয়ালার কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। লাকসামের রেলস্টেশনের ওয়েটিং এ রাজু সাহেব আজ রাত্রের গুটি কয়েক যাত্রির মাঝে একজন। স্যুট বুট পড়া বলে রাজু সাহেবের দিকে বার বার এগিয়ে আসছে একের পর এক হকার।

আজরাইল ( রহস্য- রোমাঞ্চ-ভৌতিক গল্প)

ঘটনার শুরু আজ থেকে চার বছর আগে এক রাতে। আমি সিলেট এর ওসমানী মেডিকেল এ একটা সেমিনার শেষ করে নিজেই ড্রাইভ করে ফিরছিলাম ঢাকায়। সাধারণত আমার পাজেরো টা আমার খুব প্রিয় হওয়াতে আমি কাউকে ড্রাইভার রাখিনি। সেদিন ও আমি নিজেই চালিয়ে নিয়ে আসছিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। পথে খানিক টা ঘুম ঘুম ভাব আসলেও মন টা সতেজ ছিল- কারন সেই সেমিনারে আমি আমার গবেষনার জন্য পেয়েছি প্রচুর হাততালি।

প্রতিশোধ (ছোট গল্প)

ঐ তো দেখা যাচ্ছে লালচে গোলাকার গহবর টা।দুই পাশ থেকে নেমে এসেছে কালচে কেশর। ভেতর থেকে ও নেমে এসেছে একটা- সুক্ষ্ম ও চিকন চিকন কেশর। মাঝ থেকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে ওটা। ঠিক আমার দিকে।আমার আজকে এখানে আসার পেছনে এত কষ্টের মুলে ঐ চলমান পাহাড়টা। ত্রিশ প্রহর আগে এই পাহাড়টা আমার সন্তান কে- আমার প্রাণের টুকরা কে মেরে ফেলেছে। হত্যা করেছে চরম নৃশংস ভাবে। আমি ভাবতে ও পারিনা- এভাবে আমার রক্ত কে ওটা মেরে ফেলতে পারে। আমার সন্তান না হয় খেলতে খেলতে চলমান পাহাড় টার এলাকায় চলে এসেছিল- হয়ত বা ভুল করে চলে এসেছিল ওর ঘুমানোর স্থানে- তাই বলে কি এভাবে চ্যাপ্টা করে পিষে ফেলতে হবে?

কালো যাদু - একখন্ডে সমাপ্ত সম্পূর্ণ পিশাচ কাহিনী

‘সব কাজ সবার দ্বারা সম্ভব না।’, তীব্র আপত্তির সুরে বললেন আহসান সাহেব। আহসান সাহেব তপুর বড় চাচা। রাজশাহী শহরের একজন শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। রাজশাহী কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি পড়াশুনা করেছেন কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে রীতিমত গবেষণা করেছেন আর সে বিষয়টা হল ব্লাক ম্যাজিক বা কালো যাদু। ব্লাক ম্যাজিকের উপর তিনি প্রচুর পড়াশুনা করেছেন, রাতের পর রাত কাটিয়েছেন শ্মশানঘাট আর কবরস্থানে। এমনকি হাতে কলমে ব্লাক ম্যাজিক শেখার জন্য তিনি বেশ কিছুদিন কাটিয়ে এসেছেন আফ্রিকায়,

সিংহাসন (রহস্য - রোমাঞ্চ গল্প)

আজ আপনাকে এক অদ্ভুত গল্প শোনাবো। যদি ও জানি আপনি এর এক দন্ড ও বিশ্বাস করবেন না। ভাববেন আমি পাগল কিনবা বদ্ধ উন্মাদ। কিনবা মানসিক হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসা কেউ।কিন্তু বিশ্বাস করেন আমি আজ যে কথা গুলো বলবো তাতে বিন্দু মাত্র মিথ্যা লুকানো নেই। আমি লেখক হতে পারি, বানিয়ে বানিয়ে প্রচুর গল্প লিখতে পারি - কিন্তু আমি আজ যে জিনিসটা নিয়ে আপনাদের কাছে লিখছি সেটা আমার সামনেই আছে। একটা সামান্য সিংহাসন মাত্র এটা। আমি এটাতে বসেই লিখছি আপনার কাছে। আমি এটা সম্পর্কে যা যা লিখবো সব সত্য লিখবো এটা প্রতিজ্ঞা করেই শুরু করলাম। ঘটনার শুরু যখন আমি মেসে থাকি- ঢাকায় এক অভিজাত এলাকায়।বাবার অনেক টাকা থাকায় আমোদ ফুর্তিতে আমি ছিলাম একেবারেই মত্ত। আমি পড়তাম এক অভিজাত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তে। সারাদিন আড্ডা- নেশা করা- বিভিন্ন যায়গায় হটাত করে চলে যাওয়া ছিল আমার নিত্য দিনের অভ্যাস। আমি কুমিল্লার ধর্ম সাগরে নেশা করে নৈকায় ঘুরেছি- সমুদ্রে চাঁদের আলোর নিচে বসে বসে বন্ধুদের মাঝে বিলিয়েছি ঘুমের মন্ত্র।

ফোঁড়া ( রহস্য- রোমাঞ্চ- ভৌতিক গল্প )

অনেক ক্ষন ধরে সামনে বসা মানুষ টার দিকে তাকিয়ে আছেন ডঃ তাহসিনা। মাথাটা নিচু করে বসেই আছে সেই লোক। অনেকক্ষণ ধরে বসে থেকে থেকে শেষে বলতে শুরু করল-
"আমার যে সমস্যা সেটা হল আমার পেটে একটা ফোঁড়া ঊঠেছে।"
বলেই শুন্য দৃষ্টিতে ডঃ তাহসিনার দিকে তাকিয়ে থাকল। ডঃ তাহসিনা অনেক ভাল একজন সাইকায়াট্রিষ্ট। উনি এর আগে ও অনেক মেন্টাল রুগীকে ভাল করেছেন। কিন্তু আজকের এই রুগি এসে বসেছে তো বসেছে কথা বলার কোন নাম গন্ধ নাই।

জ্বিনদের জানাযায় - একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে ছোট গল্প

হাসান বেগ একজন সরকারী কর্মকর্তা। ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের একজন পরিদর্শক। মাসিক মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে থানা স্বাস্থ্য অফিসে এসেছেন। মিটিং শুরু হতে হতে দুপুর পার হয়ে গেলো। হাসান সাহেব কর্মকর্তাদের আচরণে খুব বিরক্ত। সময় জ্ঞান নেই মনে মনে বিরবির করে বললো। আসলে হাসান সাহেবরই বা কি দোষ। থানা সদর থেকে প্রায় ২১ কি.মি. দূরে হাসান সাহেবের বাড়ি। যদিওবা বাসে সবটা রাস্তা যাওয়া যেতো তাহলও সমস্যা ছিলোনা। কিন্তু ৭ কি.মি. বাসে আর বাকিটা পথ সাইকেলে যেতে হবে।

আস্তিক - একখন্ডে সমাপ্ত সম্পূর্ণ পিশাচ কাহিনী

আমার নাম রহমান। জুয়েল রহমান। পেশায় ডাক্তার। থাকি ঢাকায়। আমি ভূত বিশ্বাস করি না। ভূত কেন আমিতো ঈশ্বরকেও বিশ্বাস করিনা। যে সময় মানুষ চাঁদে যাচ্ছে, মঙ্গলগ্রহ জয় করার প্রস্তুতি নিচ্ছে , সেই যুগে আমি ভূত নামক মানুষ সৃষ্ট একটা ভ্রান্ত ধারণাকে মনে ঠাঁই দিতে পারিনা। আমার বন্ধুরা আমকে নাস্তিক বলে। বলুক। আমার তাতে কিছু যায় আসে না। আমি আমার বিশ্বাসে অটল। কেউ টিটকারি দিয়ে আমকে আমার বিশ্বাস থেকে একটুও নড়াতে পারবেনা। আমি নাস্তিক। একজন নাস্তিক মানুষ।

রক্তখেকো [ ভয়ংকর এক রাক্ষসীর কাহিনী ]

এই মেয়েটা দেখার পরও যখন কালামের পছন্দ হইলোনা। তখন সবাই ধরে নিল এই জীবনে কালামের আর বিয়াই হইবোনা। গ্রামের সবাই কালামকে একটু-আধটু টিপ্পনিও কাটে। কিন্তু একদিন হঠাৎ করে সবাইকে অবাক করে দিয়ে কালাম বিয়ে করে ফেলল। যেমন তেমন মেয়ে নয়, এক অপরুপ সুন্দরী। গ্রামে কালামের বউ নিয়া ব্যাপক আলোচনা। কালামের বউয়ের আবার অনেক গুণ আছে। যেমন শশুর-শাশুরীর যত্ন, ভাল রান্না-বান্না, স্বামী সেবা আরও কত কি? বউ নিয়া কালামের দিন সুখেই কাটছিল।
এরমাঝে একদিন সকালে খবর বের হলো জমিরের ষাড় গরু দুইটির ঘাড়ভাঙ্গা অবস্থায় গোয়াইল ঘরে [গরু রাখার ঘর] পরে আছে। গ্রামের সবলোক জমিরের বাড়িতে হাজির। কেউ কেউ বলতে লাগল ভূত এসে ঘাড় ভেঙ্গে দিয়ে গেছে, কেউবা বলতে লাগল এটা রাক্ষসের ঘটনা। রাক্ষস এসে ঘাড় ভেঙ্গে রক্ত চুষে খেয়েছে। কেউ কেউ ঘটনাটাকে পাত্তা না দিয়ে বলছে ষাড়ে ষাড়ে লড়াই করে মারা গেছে। তাদের যুক্তিও ছিল - দুইটি ষাড়েরই শিং ভাঙ্গা। কিন্তু পরের দিন যখন একই ভাবে ফিরোজ চাচারও গরু মরে গেল। তখন সবার ভিতর একটা অজানা আশংকা সৃষ্টি হইলো।