Friday 27 February 2015

গল্পটা পুরা শোনা হল না ( ভূতের গল্প )

আমি তখন বর্ধমানের রাজ কলেজে পড়তাম, শনিবার ছিল ভেবেছিলাম দুপুরের মধ্যেই বাড়ি যাবার জন্য তৈরি হলাম কিন্তু এমন কিছু কাজ এসে পড়ল শেষ পর্যন্ত সন্ধের গাড়ি ছাড়া অন্য কোন উপাই থাকল না। সন্ধ্যা ছয়টার গাড়ি ধরতে এসে জানতে পারলাম গাড়ি ছাড়তে প্রায় একঘন্টা দেরি আছে। তাই কিছু সময় এদিক ওদিক ঘোরা ঘুরির পরে ওয়েটিং রুমের একটা কোনার দিকে গিয়ে বসে পড়লাম। শীতের সন্ধ্যা তাই স্টেশেন চত্তর ফাঁকাই ছিল। আমি যেখানে বসে ছিলাম সেখানে আরো তিনজন বসে ছিল, দুজন সতের আঠারো বছরের ছেলে আর তাদের পাশে বছর চল্লিশের একজন
লোক, তাদের কথাবার্তায় মনে হলো তিনি তাদের পরিচিত হবেন। আমি তাদের কাছে যখন বসলাম ছেলে দুটির মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে গেছে। আমার বেশ কৌতুহল হল তাই মন দিয়ে তাদের কথা শুনতে থাকলাম, দেখি তাদের ঝগড়া হচ্ছে ভূতের নিয়ে। তোমরা তো যানোই সব গল্পের রাজা হচ্ছে ভূতের গল্প, কারো কারো অবশ্য অন্য মত আছে, তা সে যার যার নিজের নিজের ব্যপার। এক বন্ধু বলছে ভূত আছে আরেক জন বলছে নেই, আর এতেই জমে উঠেছে।
প্রথম বন্ধু বলল তাহলে শোন আমার নিজের একটা ঘটনার কথা বলি – একবার আমার পিসির বাড়িতে গিয়েছিলাম রঘুনাথপুরে সেখানে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল, সেখানে গেছিলাম। তো বিয়ের দিন সারাদিন হৈ হুল্লোড় করে কেটে গেল। রাতের বেলাতে শোবার সময় বাড়িতে লোক বেশি আর জায়গা কম পড়তে থাকলো। তা কি করবো পিস্তোতভাই সুমন বলল চল আমার একবন্ধুর বাড়ি আছে, নতুন বাড়ী করেছে, এখনো গৃহপ্রবেশ হয়নি তাই একাই থাকে, সে বিয়ে বাড়িতেও এসেছে, চল আমরা তিনজনে মিলে সেখানে ওর সাথে শুয়ে পড়ি। এমনিতে আমার কোন অসুবিধা ছিলো না কিন্তু তবুও বললাম ওর কোন অসুবিধা হবে নাতো। বলল- ও একটা ঢেমনা, চল গিয়ে ওর আরেক রুপ দেখতে পাবি, ওখানে গেলেই তোর হাতে বিয়ারের বোতোল ধরিয়ে দেবে। বন্ধুদের জোর করে ধরে নিয়ে যায় ওর বাড়িতে পার্টি করার জন্য, সে করবে আপত্তি। দাড়া ওকে ডাকি কোথায় আছে দেখি, তুই এখানেই বোস আমি ওকে খুজে নিয়ে আসি। বলেই তাকে খুজতে চলে গেল, আমি তার নামও যানতাম না, কাকে খুজতে গেল সুমন। তাই সেখানেই একটা চেয়ার টেনে নিয়ে সেখানেই বসে পড়লাম। একটু পরেই সুমন ওরই বয়সি একটা ছেলেকে ধরে নিয়ে এলো- এই আমার বন্ধু শুভ এর কথাই তোকে বলছিলাম আর ও আমার ভাই বিজয়।
আজ আমরা দুজনাই তোর সাথে তোর বাড়িতে থাকবো, তোর কোন আপত্তি আছে।
শুভ বলল কি বলছিস কি আমি আপত্তি করবো, তার চেয়ে আমার তো মজাই হবে, আজ তিন জনেমিলে বেশ ইঞ্জয় করা যাবে। বেটা তুই কবে থেকে পার্মিসেন নিতে শিখলি।
না না আমার এই ভাইটা কিন্তু কিন্তু করছিল, তাই ওকে শুনিয়ে দিলাম।
শুভ বলল – তুমি কোন সংকোচ কোরোনা বন্ধু, তুমি সুমনের ভাই মানে আমারো ভাই, আমার বাড়িতে তোমার কোন কষ্ট হবে না আমি গেরেনটি দিচ্ছি।
তারপরে আমারা তিনজনে বেরিয়ে পড়লাম, শুভোর বাইকেই রওনা হলাম। সুমন বলেছিল আমি আর সুমন দুজনে তার বাইকে যাব আর সুমন তার নিজের বাইকে কিন্তু বার হবার সময় দেখি বাইকে পেট্রোল শেষ। বিয়ে বাড়িতে যে পেরেছে চালিয়েছে বাড়িতে কোন জিনিষ আনতে হবে বাইক নিয়ে ছুটেছে, তাই কখন যে তেল ফুরিয়ে গেছে বোঝাই যাইনি। শেষে শুভর বাইকেই তিনজনে যাব ঠিক করলাম, ও বলল কালকে সকালে আবার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যাবে। শুভ নিজেই চালাচ্ছিল, আমি মাঝে বসেছিলাম আর সুমন পিছনে বসেছিল। শুভদের বাড়ির কাছাকাছি আসতেই দেখতে পেলাম একটা বিশাল আকারে ছায়া মূর্তি রাস্তার এপার থেকে ওপারে চলে গেল। সেই ছায়া মূর্তিটা প্রায় তালগাছের মতো লম্বা অথচ স্বাভাবিক মানুষের মতোই মোটাসোটা, কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো এই জায়গাটাতে কোন প্রকার কৃত্রিম আলো মানে ইলেকট্রিক আলো এসে পড়েনি যে কোন মানুষের ছায়া তা হতে পারে না, কেবল মাত্র চাঁদের আলো পড়ছে। সেই চাঁদও আকাশে ঠিক আমাদের মাথার উপরে তাই ছায়া বড়তো হবেনা আকারে চেয়ে ছোটই হবে। শুভো একটা হেচকা ব্রেক মারলো, সুমন বলে উঠলো শালা হটাৎ এমনি জোরে ব্রেক মারলি কেন আমার মুখে ধাক্কা লেগে গেল। শুভ বলল কিছু দেখলি, সুমিন বলল কি দেখব।  সে সময় আমিও কিছু বললাম না, শুভ বলল না কিছু না, বলেই গাড়ি চালিয়ে শোজা ওদের বাড়িতে উঠল। তারপরে বেশ কিছু সময় আমারা আড্ডা মারলাম, শুভ ওদের ফ্রিজ থেকে বিয়ারের বোতোল বের করে আনল। কথায় কথায় সুমন বলল ঐ যায়গাটাতে এমন ব্রেক কষালি, দেখ ধাক্কালেগে আমার ঠোঁটই কেটে গেছে, তোকে যে কোন --------- ভাই ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েছে ------। সুমন এমন একটা মুখ খারাপ করা গালি দিল সেটা আর বলা যাবেন। শুভ কিছুক্ষন চুপকরে থেকে বলল কি বলবো ভাই বললেই তুই আবার আমাকে নিয়ে এমন হাঁসাহাঁসি করবি, তাই বলছি না। সুমন একটা অবাক হয়ে বলল কি হয়েছে ভাই আমাকে বল, কোন সমস্যা, তুই তো এমন চুপসে যাবার ছেলে নোস, তুই কোন প্রতিবাদ করছিস না, মুখ থেকে কোন ভালো ভালো বানী দিচ্ছিস না, কি ব্যাপার শরীর টারীর ভালো আছে তো বলেই ওর কপালে হাত দিল।
না না আমি ভালোই আছি।
তাহলে কি ব্যাপার?
আসলে এইখানে বাড়িটা বানিয়ে ফেঁসে গেছি।
কেন জায়গাটা তো বেশ ভালোই, এই দিকটায় বেশ ফাঁকা ফাঁকা জোড় ( ছোট নদীর মতো ) আছে তাই এদিকে আর বাড়িও হবেনা খুব একটা।
ব্যাপারটা তুই কিছুই যানিস না, আসার সময় কি দেখে গাড়ি থামিয়ে ছিলাম যানিস?
কি দেখে?
একটা বিশাল আকারের ছায়া মূর্তি আমাদের রাস্তার এপার থেকে ওপারে চলে গেছিল। আমিও সাথে সাথে বললাম আমিও দেখেছি। তাই সুমন কথাটা উড়িয়ে দিতে পারলো না, বিভিন্ন রকমের যুক্তি দিতে থাকলো এটা কোন রাস্তা থেকে বা কারো বাড়ির জানালা থেকে আলো এসে পড়েছে, আর সেই বাড়ির কোন লোকেরই ছায়া দেখেছিস এই আরকি। শুভ বলল না, না ব্যাপারটা এতো সোজা নয়, তুই একটু ভেবে দেখ ওই গলিটাতে কোন বাড়ি থেকে আলো এসে পড়ছিলো না। আর রাস্তাতে আর কোন গাড়িঘোড়াও ছিলো না কেবল চাঁদের আলো ছাড়া আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার কোন লোককে কি রাস্তায় দেখিতে পেলি, না পাশনি তো। তবে! আর এই রাত সাড়ে-বারোটার কেই বা রাস্তাই ঘুরে বেড়াতে যাবে, তাও বা মেন রাস্তাতে হতো, কোন মানুষ হয়তো দরকারে বার হতে পারে কিন্তু এই গলিতে কার কি দরকার হবে।
যদি কোন চোর ছেচোড় হয়।
তাহলে তো দু একটা বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটতো, কই সে রকম কোন ঘটনার খবর এই পাড়াতে কারো মুখে শুনিনি। তাছাড়া একটা জিনিসে একটু খটকা লাগছে।
কি কি বেপারে, আমি কিছুটা উৎসাহিত হয়ে বললাম।
শুভ বেশ কিছুটা চুপকরে থেকে বলল, সুমন তুই যানিস তো অনেক দিন থেকেই এখানে বাড়ি করার জন্য যায়গা খুঁজছিলাম। সে রকমের ভালো যায়গা পাচ্ছিলাম না। কোথাও পিছিনের দিকে পাচ্ছিলাম, সামনে রাস্তা একেবারে সরু গলির মতো, আবার কোথাও যায়গা ভালো পেলে জমির দাম এতো বেশি বলছিল যে আমাকে পিছিয়ে আসতে হচ্ছিল, আবার কোথাও জায়াগা ভালো দামেও ঠিকঠাক হলে, জমির পেপার দেখতে গিয়ে দেখতে পারছি সরিকি ঝামেলা আছে ওই জমিতে, আবার কোন জমিতে প্রায় ত্রিশ চল্লিশ বছরের টেক্স বাকি পড়ে আছে। এতো ঝামেলা করে এক দালালের মধ্যদিয়ে এই যায়গাটার দাম দস্তুর হয় চলতি দামের প্রায় অর্ধেক দামে পেয়ে যাই। দালালটাকে জীঞ্জেস করাতে বলেছিলো জায়গার মালিকের মায়ের শরীর খুবই খারাপ উনার খুব তাড়াতাড়ি টাকার প্রয়োজন তাই একটু কমদামে দিয়েদিচ্ছে। জায়গার সব কাগজ পত্র ঠিক ছিল তাই কিনে নিলাম। তাড়াতাড়ি বাড়ির কাজ শুরু করে দিলাম, যখন বাড়ির কাজ অর্ধেক হয়ে গেছে তার পরে এই যায়গাটা সম্পর্কে শুনলাম, তখন অর্ধেক বাড়ি ছেড়ে দেওয়ারও সম্ভব না। তাছাড়া আমি নিজে এই ভূত প্রেত অলৌকিক ব্যাপার স্যাপার বিশ্বাস করতাম না, তাই বাড়ির কাজ চালিয়ে নিয়ে গেছিলাম। কিন্তু যখন নিজের চোখে দেখলাম তখন আর অবিশ্বাস করার কোন প্রকার উপাই থাকলো না।
কি দেখ্‌লি, ব্যাপারটা খুলে বলতো। বলতে বলতে রান্না ঘরের থেকে ঝান্‌ঝনাত করে শব্দ হলো, আমরা তিনজনেই তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে দেখি সব বাসন কোসন রান্নাঘরের মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। শুভ সেগুলোকে তুলতে তুলতে বলল দেখ এই, এইসব ঘটনা, প্রথমে ভেবেছিলাম জানালা থেকে বেড়াল ঢুকে ফেলেছে হয়তো, তাই পরপর দুএক দিন হওয়ার পর ভালোকরে জানালা দরজা বন্ধ করে রান্না ঘর থেকে সব কিছু গুছিয়ে গেলেও এই একই ব্যাপার ঘটে আবার ঘটনাটা রাত বারটা আর একটার মধ্যেই ঘটে এর কোনদিন উল্টো ঘটেনি। একবার আমি নিজে জেগে বসেছিলাম বেড়াল মারবো বলে, সেদিন তো আমার সামনেই হটাৎ জানালা বন্ধ তবুও কোথা থেকে একটা দমকা হাওয়া এসে সব কিছু পড়ে গেল। সেদিন একটু ভয় পেয়েছিলাম, তাছাড়া এ রকমের আরো অনেক টুকিটাকি ঘটনা ঘটেছে যেগুলো বলে বোঝানো যাবে না, যারা অনুভব করেনি তাদের বোঝানোও যাবে না।
এই সব দেখে সুমনও শুভর কথা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারলো না, বললো তুই পাড়াতে কোন খোজ খবর নিস নি। শুভ জানালো – নিইনি আবার, ও ঘটনার পরে আমার পাড়া প্রতিবেশিদের জিঞ্জেস করেছিলাম, প্রথম প্রথম কাউকে জানতে চাইলেই এড়িয়ে যেতো। একবার একজন বলেছিল, তাদের বাড়িতে এরকম উৎপাত আগে হোতো, কিন্তু আমার বাড়িটা হবার পর থেকে তাদের বাড়িতে নাকি কিছুটা কমেছে, তারা নাকি একটু দূরে থাকে বলে কমেছে, আমার বাড়িটা বেশি কাছে বলেই নাকি আমার ওপর এর প্রভাব বেশি। আমি জানতে চেয়েছিলাম কিসের থেকে দূরে, সে ব্যাপারে কিছুই বলল না, আমাকে এড়িয়ে গেছিলো। একজন বৃদ্ধলোকের কাছে শেষে জেনেছিলাম আমাদের বাড়িতে নাকি কোন গোলমাল নেই, আছে আমাদের থেকে একটু দূরে পাশের ওই যে বাড়িটা দেখলি, ওই দিকের ওই বাড়িটাতে বলে জানালা খুলে একটু দূরে একটা বাড়ি দেখালো। বাড়িটা বেশ পুরোন কিন্তু পোড়োবাড়ি বলে মনে হল না। ঐ বাড়িটাই আসলে অভিশপ্ত।
আমি বললাম- ঐ বাড়িটা অভিশপ্ত তো তোমার বাড়ীতে উৎপাত কেন?
শুভ বলল আগে পুরো গল্পটা শোনো বন্ধু, যদিও আমি পুরোটা যানি না কি ব্যাপার ঘটেছিলো, তবে সেই বৃদ্ধ লোক আমাকে যেটা বলেছিল সেটা বলছি। অনেকদিন আগে এই পাড়ার পুরোটা জায়গার একজন মালিক ছিল। সে তার এক বন্ধুকে নিয়ে এসে থাকতে দিয়েছিল। সে অনেক গরীব ছিল তাই তাকে নিয়ে এসে ছিল। কিন্তু সে একজন বিশ্বাস ঘাতক ছিল। বন্ধুকে বলল বন্ধু তুমিতো আমাকে থাকতে দিয়েছ, তোমার মেয়ে হয়তো আমায় থাকতে দেবে, কিন্তু তোমার মেয়ের বিয়ে হবে আর তুমি যখন থাকবে না তখন যে আমার কি অবস্থা হবে সেই ভেবেই রাতের বেলা ঘুম আসে না। এই জমির যিনি মালিক ছিলেন অজিত চৌধরী। উনি খুব উদার মনের মানুষ ছিলেন, তুমি কোন চিন্তা করো না বন্ধু আমি তোমার জন্য পাকা ব্যবস্থা করে যাব, যাতে আমি না থাকলেও তোমার কোন অসুবিধা হবে না। তুমি কালকে উকিলের সাথে দেখা করো, ঐদিকের পাঁচ কাঠা জমি রেজিষ্ট্রি করে দেবো। কালকেই তুমি কাগজ পত্র বানিয়ে আনো আমি সই করে দেব। কিন্তু বন্ধুটি ভালো করেই যানতো উনি কাগজ পত্র ভালো করে পড়বেন না, তাই পুরো জমিটাই আর অন্যান্য সম্পত্তি সব কিছুই দানপত্রের কাগজ বানালো। ছল চাতুরি করে তার উপরে সইও করিয়ে নিলো। অজিতবাবু কিছুই যানতে পারলো না।  আবার উনার মেয়ের একজন ছেলের প্রেমে পড়েছিল, মেয়েটি আসলেই প্রেম করে ছিল কিন্তু ছেলেটি তার বিশাল সম্পত্তির লোভে তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। মেয়ের বাবা কোন আপত্তি করেন নি। বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যায়। বিয়ের দিন বন্ধুটি তার আসল রুপ দেখালো সে সবার কাছে বলে বেড়াতে লাগলো এই সবকিছুর মালিক নাকি সে। কথাটা বরের কানেও গেলে, সে তো বিয়ে করতে চেয়েছি, মেয়েটির সম্পত্তির লোভে সেটা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে এই আশংকায় সে বেপারটা তলিয়ে দেখল, সে যানতে তা প্রেমিকার বাবার সম্পত্তি তার বন্ধু নিজের নামে করে নিয়েছে তখন সে বিয়ের দিনই বিয়ে ভেঙ্গে চলে যায়। বন্ধুর উপর রাগে দুঃখে অজিত বাবু গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করলেন। তার সমস্ত চিতা ভস্ম ওই বাড়িরে উঠানেই পোতা আছে গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয় নি। আর দেবেই বা কে তার এক মাত্র মেয়ে ছাড়া আরতো কেও ছিলো নিজের বলতে। সেওতো গায়ে আগুন লাগিয়ে পুড়ে মরেছিল, তার বাবাকে পুড়িয়ে আসার পরেই। আগুনে পোড়ার সময় সে কি বিভৎস চিৎকার, তার সাথে বলেছিল সে কারোকে ছাড়বে না, যেই এই সম্পত্তির ত্রিসীমানায় আসবে তাদের সকলকে সে শেষ করে দেবে। তারপরে তার পোড়া অংশকে সেই উঠানেই কবর দেওয়া হয়। এই ঘটনার কিছুদিন পরথেকেই নাকি এইসব অতিমানবীক ঘটনা ঘটতে সুরু করে শোনা যায়। কিছুদিন পরে মেয়েটি বাবার বন্ধুর পরিবারের সকলে বিভিন্ন ঘটনায় অদ্ভুদভাবে মারা গেছিলো। বৃদ্ধলোকটির মতে মেয়েটির আত্মায় নাকি এসবের জন্য দায়ী। এবার শুভকে থামিয়ে বলল সেটাতো ঐ বাড়িতে ঘটেছিল তার সাথে তোর বাড়ির কি সম্পর্ক। শুভ আবার বলে চলল সম্পর্ক আছে আমদের এই বাড়িটা যেখানে তৈরি করেছি আগে সেটা ঐবাড়িটারই বাগানের একটা অংশ ছিল। অজিতবাবুর বাড়ির জমির সীমানার মধ্যে যেকটা বাড়ি তৈরি হয়েছে সব কটা থেকেই বাড়ির লোকেদের উচ্ছেদ হতে হয়েছে। এমনকি তার জমির সীমানার পাশের জমিতে যারা বাড়ি করেছে তাদের বাড়িতে একটু আধটু বিঘ্ন ঘটেছে তবে সেটা বিশাল আকারের কিছু হয়নি। সীমানার মদ্ধ্যে যারা বাড়ি করেছিল তাদের মদ্ধ্যে একজন নাকি জীদকরে এখানেই পড়েছিল, কোন কিছুকেই সে পাত্তা দেয়নি, একবছর সে থাকতে পেরেছিল তারপর সেখানেই তার মৃতদেহ পাওয়া গেছিল। শুভ একেবারে বিশন্ন হয়ে বলল আমারো মনে হচ্ছে, এই বাড়িটা ছেড়ে চলে যেতে হবে, যত দিন পার হচ্ছে উৎপাত তত বেশি বেড়েচলেছ।
আমি বললাম এর থেকে বার হবার কোন উপায় নেই- তা আমি যানিনা। তবে যে বৃদ্ধ লোকটি আমাকে এই সব কথা বলেছিল সে এও বলেছিল, মেয়েটির আর তার বার অস্থি ওই উঠানের মধ্যেই আছে তাই সেই প্রেতেত্মা তার জীদ ও ইচ্ছাশক্তির বলে খুবই শক্তিশালি হয়ে উঠেছে, যদি ওই বাড়ির উঠান খুড়ে মেয়েটির আর তার বাবার অস্থি খুযে বেরকরে গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া যায় তাহলে তার আত্মার শক্তি কমে যাবে, তারফলে যায়গাটা বাসযোগ্য হয়ে উঠতেও পারে।
আমারা শুভর মুখ থেকে গল্প শুনছিলাম আর বিয়ার খাচ্ছিলাম। সুমন বলে উঠল তাহলে চল এখনি ওই বাড়িতে গিয়ে হাড়গোড় কি আছে খুজে নিয়ে আসি, চল আমার সাথে। কথাগুলো সুমন বলছিল নাকি পেটের ভিতর থেকে মদে বলছিল বলা মুসকিল, তবে এটা মানতেই হবে পেটে দুপেক পড়লে অনেকেরই সাহস বেড়ে যায়, এমন সব কাজ করতে যায় যেগুলো এমনিতে সে পারে না।
শুভ বলল এমনিতে ওই বাড়িতে যেতে আমার সহস হয় না, তবে তোরা যখন বলছিস তখন কাল সকালে একবার তোদের সাথে গিয়ে একবার দেখতে দোষ কি?
সুমন বলল কাল কেন আজ এখনি যাব, ভূত আবার কি, আমি ভূত ফূত মানি না। চল আমার সাথে আমার পিছিনে পিছিনে থকবি ভিতুর দল সব। এমনি হলে হয়তো কথাটাকে ঘুরিয়ে দিতাম, কিন্তু আমার পেটেও মাল পড়েছে, আমাকে ভীতু বলা, চল তবে আমিও যাবো।
পঁপঁপঁপঁপঁপঁপঁপঁপঁপঁ---- শব্দ করে একটা ট্রেন ঢুকছে। এতোক্ষন আমি তন্ময় হয়ে তাদের গল্প শুনছিলাম, বাকিটা শোনারও ইচ্ছে ছিল, কিন্তু এই ট্রেনটাতেই আমাকে যেতে হবে, তাই অনিচ্ছা থাকলেও ট্রেনে চেপে পড়তে হল। বাকি গল্পটা কি যে হল আর শোনা হল না, তাই তোমাদেরও শোনাতে পারলাম না, বাকিটা কি হবে তোমরা নিজেরাই নিজের নিজের মতো করে কল্পনা করে নাও।
লেখক – শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জ্জী