Sunday 1 March 2015

কৃপন শেয়ালের গল্প

একবার এক সময়ের কথা, একটা জঙ্গলের পাশের একটা গ্রামে একটা শিকার থাকতো, তার বাড়িতে সে আর তার বৌ দুজনাতে থাকতো। সে একজন শিকারি ছিল, তাই শিকার করে সেইসব পশুপাখির মাংস বিক্রি করে, যে টাকা পয়সা পেতো তাই দিয়েই তার সংসার চলতো। শিকার করার জন্য কোন কোন দিন তাকে গভীর জঙ্গলের ভেতরেও যেতে হোত, আবার কখনো বা খুব সহযেই শিকার পেয়ে যেতো।
একবার সে সারাদিন কোন শিকার পায়নি, জঙ্গলে অনেক গভীরে চলে এসেছে তবুও কোন শিকার পেলো, এদিকে দিন ফুরিয়ে রাত হতে চলল, রাতের বেলা জঙ্গলে থাকা মোটেই নিরাপদ নয় তাই বাড়ির দিকে রউনা হলে। আজ তাকে রিক্ত হাতেই ফিরতে হচ্ছে। ফিরে আসার পথে সে দেখতে পেল একটা বরাহ, যাকে অনেকে বনশুকর বলে থাকে। শিকারিটা ভাবল আজ এটাকেও শিকার করা যাক, তাহলে আর খালি হাতে তাকে ফিরতে হবে না। যেইনা ভাবা অমনি কাজ, তার ধনুকে তুণ পরিয়ে বরাহকে লক্ষ করে ছুড়ে দিল, একেবারে অব্যর্থ বাণ। কিন্তু যেই না তীর গিয়ে বরাহের লেগেছে সেও মানুষ দেখতে পেয়ে শিকারীকে দৌড়ে এসে আক্রমন কর। সে বরাহের ছিল বিশাল বড় বড় দাঁত, তাই দিয়ে সে শিকারীকে মেরে ফেলল। বরাহের শরীরেও বাণ লেগেছিল তাই সেও মারা গেল।
বরাহটা যখন মানুষটাকে মারার জন্য দৌড়ে আসছিল সেই সময় সেখান দিয়ে পার হচ্ছিল একটা অজগর সাপ, তার উপরে বরাহের একটা পা পড়েছিল। সেটা ছিল বিশাল বড় একটা প্রানী তাই তার পায়ের চাপে সেই সাপটাও মরে গেল।
ঠিক সেইসময় সেখান দিয়ে পার হচ্ছিল একটা  শিয়াল, সে আবার দুদিন ধরে কিছু খেতে পায়নি, একসাথে এতো খাবার দেখতে তার আনন্দ আর দেখে কে। সে খুশিতে লাফাতে লাফাতে হিসাব করতে লাগলো সাপটা খাওয়া যাবে দুদিন, মানুষটা যাবে দশদিন আর বরাহটা যাবে আঠারো বিশ দিন। আহা প্রায় এক মাসের খাবারের জোগাড় হয়ে গেল। ভগবান যখন যাকে দেন এভাবেই উদার হাতে দান করেন। শিয়ালটা ভাবতে লাগলো কোনটা আগে খাওয়া যায়, সাপটাকে না, মানুষটাকে নাকি বরাহটাকে। সে ঠিক করতে পারে না আজ কোনটা খাবে। শেষ পর্যন ঠিক করলো না আজ আর এদের কারোকে খাবেনা, কাল থেকেই এদের খাওয়া শুরু করবে, আজকে ধনুকের এই ছিলাটা খেয়েই কাটিয়ে দেবে। শিকারির ধনুকের ছিলাটি ছিল চামড়ার যেটা আজ শিয়ালটা খাবে ঠিক করেছে। সেই ছিলাটা ধনুককে টান দিয়ে বাঁধা থাকে, শিয়াল যেই মাত্র সেটাতে কামড় দিয়েছে ওমনি ধনুকটি ঝটকা মেরে সোজা হয়ে শিয়ালের বুকের ভেতরে ধুকে গেল আর কৃপণ শেয়ালটা মারা গেল।
নীতিকথাঃ সঞ্চয়ী হওয়া ভালো, কিন্তু কৃপন হওয়া ভালো নয়।
অনুলিখন- শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জ্জী