Tuesday 16 December 2014

একটি সড়কীয় ক্রাশ খাওয়া প্রেম Sarokiy prem

বাসে উঠতে যাবো,ঠিক সেই মূহুর্তে মা বললো তনু তোর বাবা কই???আমার দু চোখ বাবা কে খুজে ফেরে,আমি আতকিংত আমার বাস ছেড়ে দিলে বাবার সাথে দেখা হবে না এটা ভেবে...।সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বাবা আমার পাশে এসে দাড়ালো...।
-বাবা কোথায় ছিলা?
-এইতো ওই ছেলেটার সাথে কথা বলতে গেসিলাম।
-কোন ছেলেটা...???
-ওই যে সুন্দর করে ছেলেটা...।
সুন্দর করে হোক আর যে কারনেই হোক আমি পিছন ফিরে ছেলেটার দিকে তাকাই...।সত্যিই “সুন্দর করে” কথাটা তার জন্য উপযুক্ত...।
কিন্তু আমার তার চেহরাটা খুব চেনা চেনা লাগলো...।শীতের দিন ছেলেটা একটা লেদার জ্যাকেট পরা।অপূর্ব বলতে যদি কোনো উপমা কোনো ছেলেকে লাগানো যায় তবে সে সত্যিই অপূর্ব।

-বাবা ছেলেটা কে?

-এইতো আমাদের থানায় নতুন আসছে,এ এস পি। লাস্ট বিসিএস এ টিকেই জব...।আমাদের এখানে তার ট্রেনিং।

-ও....(মনে মনে আরো কৌতুহল)

এবার মায়ের কথায় চমকে উঠি, “দেখ এমন একটা সুন্দর ছেলে কোনো বাবা মায়ের থাকলে আর কি চাই বল...”

-না মা’ তার আগে ভাবো ছেলের মাথায় কি আছে,একবারের বিসিএসেই সে টিকছে...।

এরপর বাবা মা’য়ের সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতে বলতে গাড়িতে উঠি আমি,উদ্দেশ্য যান্ত্রিক শহর ঢাকা।

আমার ডিফেন্সএর লোকদের প্রতি ছোটবেলা থেকেই কৌতু্হল,সেই কৌতুহলের ভিত্তিতেই আমি চোখ বুলিয়ে তাকে চারপাশে খুঁজি।ভেতরে ভেতরে একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করে নিশ্চই ছেলেটার সাথে বডিগার্ড থাকবে,আর ওনার কোমড়ে একটা ইয়া ওজনদার পিস্তল।ছেলেটাকে খুঁজে পেলাম একদম সামনের একটা সিটে।পাশের সিটটা ফাঁকা(কারন পরে বলবো।)



এর কিছুক্ষন পর আমি আবিষ্কার করি আমি এখন একটা ভিআইপি গাড়ি তে যাচ্ছি,কারন আমি যে গাড়িটায় যাচ্ছি সেটাতে একটা ব্যাংকের জিএম,একজন এ এস পি,আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান আর একজন কাস্টমস অফিসার।নিজেকে খুব ভাবিস্ট মনে হলো আমার,কারন এদের প্রায় সবাই আমাকে চেনে শুধু সেই এ এস পি ছাড়া ...।থাক চিনতে কতোক্ষন,আর নাই বা চিনলো তাতে কি সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে গাড়ি একটা ফেরিঘাটে এসে থামলো,প্রচন্ড ঠান্ডা,আমি নিচে নামলাম এক কাপ চা খেতে...।এ এস পি ও নিচে...।সত্যি বলতে অতিরিক্ত সুন্দর হওয়ার জন্য আমি তাকে বারবারই আড়চোখে দেখছি...আর সাথে সাথে আবিষ্কার করলাম সেও আমার দিকে আড়চোখে না সরাসরি তাকাচ্ছে...। এবার আমি একটু লজ্জা আর ভাবে পড়ে গেলাম হায় হায় এ তো আমারেই দেখে... দেখুক...।আমি আর তাকাবোনা।ভাবে আছি...।বাস ছাড়লো...।চললো অনেক সময়....এর মাঝে দেখলাম সে তার সিট থেকে আমাকে দেখছে।আমি তো মনে মনে খুব খুশি...

এবার আমাদের লঞ্চ পাড়াপাড়,উঠলাম লঞ্চে,মিনিট দশেক পর আমি একটু করিডোরে বেরোলাম বাতাস খেতে,বলা যায় তাকে দেখতে।....কিছুক্ষন গেলো আমি কেবিনে ঢুকবো হঠাৎ কারো ডাক শুনে চনকে উঠি,আসলে এক্সপেকটেশন ছিলো না...।

-এক্সকিউজ মি

-হ্যা,বলেন (মুখে মুচকি হাসি,মনে আনন্দ)

-আপনি কি কখোনো UCC তে কোচিং করতেন????

-হ্যা,কেন বলেন তো? সেতো সেই ২০০৮ সালের কথা। ৪ বছর । আচ্ছা তাই আপনাকে আমার খুব চেনা চেনা লাগছিলো!!!

-আমাকে চিনতে পারছেন না?আমি সুমন আপনাদের ইংলিশ পড়াতাম...।

[আকাশ থেকে পড়বো না মহাকাশ থেকে পড়বো ঠিক মিলাতে পারছিলাম না।যে সুমন স্যারের জন্য দিনের পর দিন অসহ্য ক্লাশ গুলা করতাম ওখানে,যেখানে বাকি দিনগুলোতে ঘুমিয়ে কাটাতাম হোস্টেলে,সেই সুমন স্যারকে কি না আমি চিনি নি???]

-আসলে হয়েছে কি আপনি অনেক চেন্জ হয়ে গেছেন স্যার,অনেক অন্যরকম,আর ডিফেন্সে থাকার জন্য চুল কাটতে হয়েছে তাই আমি চিনতে পারিনি,একটু মোটা হয়েছেন...।কিন্তু আমি আপনাকে কেনো চিনলাম না??? আর আমি আপনার স্টুডেন্ট আমাকে আপনি বলতে হবে না।

-তুমি কি করে জানো আমি ডিফেন্সে আছি???

-বাবা বলেছে...।

-বাবা??? কে??? স্যার(বাবা কলেজের প্রফেসর তাই এই সম্বোধন)????

-হু,কি বলো তখন তো তোমাকে দেখলাম না কাউন্টারে...।

-স্যার বাদ দেন,অন্য কথা বলেন,কেমন আছেন???আপনার বডিগার্ড কই???আর আর্মস???আমি দেখতে চাই আপনার পিস্তলটা,দেখাবেন???

আমার চোখে মুখে কৌতুহল বডিগার্ড সহ কাউকে দেখবো আর তার আর্মস দেখবো...সব আশায় গুড়ে বালি দিলো ব্যাটা!!! বলে কিনা “আরে আমি একটা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি ঢাকা তাই সাথে আর্মস নাই আর বডিগার্ড কাউন্টার অব্দি ছিলো আমার সাথে আসে নি....”(আমার মুখটা ফুটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো)

-আপনার পাশের সিটটা ফাঁকা কেন???(পরে বলবো বলেছিলাম)

-ওটা নিরাপত্তার জন্য,আমার জন্য দুটো সিটেরই টিকেট কাটা হয়েছে যেনো আমি কোনো ঝামেলা ছাড়া যেতে পারি...।

একজন ডিফেন্সের সরকারী কর্মকর্তার প্রতি সরকারের অগাধ ভালোবাসা দেখে আমি মুগ্ধ।মনে মনে বলি “ইশ!!! এরা কত্তো সুযোগ সুবিধা পায়,আমিও বিসিএস দিবো।”

আমরা দুইজনই দুইজনের ফোন নাম্বার নিলাম...।কথা হবে বলে কথাও দিলাম।



একসময় সময় হয় আমাদের বাসের জার্নি শেষ করে নেমে যাওয়ার,পরে তারসাথে অনেক ফোনে কথা হতো।এখোনো হয় কিন্তু ইকটু আধটু,কারনটা হচ্ছে একজন লাইসেন্স সহ পিস্তল আলা মানুষও মনে হয় তার “বউ” নামক গ্রেনেডকে ভয় পায়...।



আমার মন এখনও টিচারীয় প্রেমে হাবুডুবু খায়, টিচারদের উপর আমার ক্রাশ খাওয়া পুরোদমে চলছে।।খেতেই থাকি বার বার।সবার খালি বিয়ে হয়ে যায় ।।



[[উৎসর্গ: আমার কোচিংএর সুমন স্যার আর তার সুইট কিউট বউ মুমুকে,গত জুলাই মাসে তাদের বিয়ে হয়। যদিও তারা কেউ এই গল্পটা পড়বেন না। ]]

লিখেছেন - তনুশ্রী তালুকদার