Monday 29 December 2014

পথের অজান্তে Pather ajante

এক”      

বাস থেকে নেমেই শাহবাগের মোড়টা পার হল অরণ্য ।ফুলের দোকান গুলোর পাশ ধরে আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগল । হরেক রকমের ফুলগুলোদেখতে তার কেন জানি একটা আলাদা ভাল লাগা কাজ করে । খুব ক্লান্ত লাগছে !রিক্সায় চাপলে ভাল হতো । কিন্তু কি আর করা ! মাসের শেষ ।

পকেটে অল্প কিছুটাকা । এ মুহূর্তে রিক্সায় চাপাটা তার জন্য গরীবের ঘোড়ারোগ তুল্য । উপায় নাদেখে হাঁটতেই থাকল । হাঁটতে হাঁটতে টিএসসি’র কাছাকাছি এল সে ।
সন্ধ্যারপরএই জায়গাটা অদ্ভুত রকমের একটা আবেশ তৈরি করে চারপাশে ।কোলাহলে কানায়কানায় পূর্ণ জায়গাটায় কাউকে দেখে মনে হয় না কারো কোন দুঃখ থাকতে পারে ।সবাই কেমন হাসি খুশি- আড্ডায় মেতে আছে । কেউ আসছে ,কেউ যাচ্ছে । কেউ বসেকেউ দাঁড়িয়ে- কেউবা অকা্রণ এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে । টং গুলোর চারপাশেভীড়তো সারাক্ষণ লেগেই আছে । রকমারি ভাজাপোড়া খাবারগুলো কম বেশি সবাইকেআকৃষ্ট করে । ফুচকা-চটপটি আর চায়ের টং গুলোও কম যায় না । সর্বত্রই লোকারণ্য। শত শত মানুষ গুলোর ভীড়ে ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেমেয়েই বেশি ।

এদিকওদিক চোখ বুলাতে বুলাতে অরণ্য একটা চায়ের টং-এর কাছে বেঞ্চিতে বসে পড়ল । আজবিকেলে ঋতু ফোন দিয়েছিল । সন্ধ্যার পর এখানে থাকতে বলেছে । প্রথমে না-ইকরে দিয়েছিল সে । পরে কেন জানি রাজি হল । চরম বিরক্ত লাগছে নিজের উপর !রাজি না হলেই ভাল হতো । মেয়েটার কোন সময়জ্ঞান নেই । কতক্ষণ বসে থাকতে হয় কেজানে ! চারপাশে ভাল করে চোখ বুলাল অরণ্য । নাহ্ ওর আসার কোন লক্ষণ দেখাযাচ্ছে না । ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেল আপনা আপনি । এভাবে কিছুসময় কেটে গেল । কিছুক্ষণ পর ছোট্ট একটা ছেলে এসে অরণ্যের পিঠে হাত রাখল ।‘ভাইয়া ফুল লইবেন , ফুল ? একডা দুই টেকা-’। বিরক্ত মুখে পেছন ফিরল সে ।ছেলেটাকে দেখে বিরক্তি কিছুটা স্তিমিত হল । একেবারেই ছোট্ট একটা বাচ্চা বলাযায় । বয়স মোটেও পাঁচের বেশি হবে না । এই বয়সেই সে নিজের নামটা লিখিয়েফেলেছে বেঁচে থাকার কঠিন যুদ্ধে ! অর্ধনগ্ন শরীরে ছেঁড়া ময়লা প্যান্ট আরসারা গায়ে ধূলোমাখা  ছেলেটির হাতে যে ভাঙ্গা প্লাস্টিকের বাটিটা আছে তাতেমাত্র ছয় সাতটা গোলাপ ফুল । দেখেই বুঝা যায় ফুলের দোকানের ফেলে দেওয়া বাসিফুলগুলো থেকে কুড়িয়ে এনেছে অপেক্ষাকৃত ভাল ফুলগুলো । ছেলেটা আবার বলল ,‘লইবেন ভাইয়া ? নেন না- দুই টেকা-’। অরণ্যের ইচ্ছে হল ফুলগুলো কিনে নিতে ।কিন্তু এই আর্থিক সংকটের সময় অযথা কাউকে মায়া মমতা দেখানো অর্থহীন । তাইকোমল কন্ঠে বলল , ‘টেকা নাইরা বাবু । থাকলে নিতাম’। ছেলেটাকে অগত্যা অন্যকাস্টোমার খুঁজতে হল । অরণ্য ওরদিকে চেয়ে রইল । ওর এক একটা ব্যর্থপ্রচেষ্টা দেখে এক একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে অরণ্য । জীবনটা কেমন জানি ।সবকিছুতেই যেন উপযোগ প্রয়োজন । যতক্ষণ ফুলগুলোর উপযোগ আছে ততক্ষণই তাদেরমূল্য । উপযোগ নেই , মূল্যও নেই । আচ্ছা , মানুষের ক্ষেত্রেও কি উপযোগশব্দটা খাটে ? মানুষেরও কি উপযোগ বাড়ে কমে ? হাবিজাবি ভাবতে লাগল অরণ্য।হঠাৎ ওর ভাবনায় ছেদ ঘটাল একটা দৃশ্য ।

অরণ্য লক্ষ্য করল রাস্তার এইপাশে রিক্সা স্ট্যান্ডের সামনে একটা মেয়ে একা দাঁড়িয়ে । বয়সে ওর সমানই হবে। রাতের আলোয় মেয়েটার মুখ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না । ছোট্ট ছেলেটা মেয়েটাকেফুল নিতে জোরাজুরি করছে অনেকক্ষণ ধরে । এমনকি তার উড়নার এক প্রান্ত ধরেওটানছে । আশ্চর্য ! বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই মেয়েটির । কোথায় যেন হারিয়েগেছে সে । ব্যাপারটা অরণ্যের কাছে অস্বাভাবিক ঠেকল । মেয়েটি নিশ্চল দাঁড়িয়েআছে তো আছেই । চারপাশে হাজারো মানুষের অজস্র কোলাহলের ধ্বনি প্রতিধ্বনিওকে যেন ছুঁতে পারছে না । এই অন্ধকার রাত্রির গভীর কোলাহলেও কেউ যেনির্জনতার ছবি এঁকে দিতে পারে অরণ্যের তা জানা ছিলনা । নিজের আজান্তেই উঠেদাঁড়াল সে । ধীর পায়ে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেল । ছোট্ট ছেলেটি ততক্ষণেঅন্যত্র চলে গেছে । অরণ্য মেয়েটির পাশে এসে দাঁড়াল । ওর চোখে চোখ রাখতেইঅরণ্য যেন গভীর এক অন্ধকার জগতের দেখা পেল । মেয়েটির বিষাদগ্রস্থ অপূর্বমুখখানা ঢেকে আছে অমাবস্যার আঁধারে ।অরণ্য আচমকা বলে উঠল , ‘আপনাকে নাদেখলে জানা হতো না কোলাহলের ভীড়েও নির্জনতা লুকিয়ে থাকে । জোছনার আলোও ফিকেহয়ে যায় কখনো কখনো’ ।অরণ্যের কথায় মেয়েটি যেন সংবিৎ ফিরে পেল । অপ্রস্তুতভঙ্গিতে বলল , ‘কে আপনি ? কি চান ?’ অরণ্য শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল , ‘ কিহয়েছে আপনার ?’ ‘কি হয়েছে মানে ?’ মেয়েটির চোখ দুটো বাঘিনীর মত জ্বলে উঠল ।‘কে আপনি ? আপনাকে তো আমি চিনিনা ! আপনার সাহস তো কম না । চিনি না জানি নাঅপরিচিত একটা মেয়ের সাথে কথা জুড়ে দিলেন ! আচ্ছা আপনারা ছেলেরা মেয়েদেরপেয়েছেন টা কি ? রাস্তাঘাটে একা মেয়ে দেখলে হিমু সাজতে ইচ্ছে করে , না ?’মেয়েটির কথায় অরণ্য ভ্যাবাচেকা খেল , ‘সরি আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন’ । মেয়েটিরাগত স্বরে বলল , ‘দেখুন আপনি এখান থেকে যান । আমার কিচ্ছু বুঝা লাগবে না ।প্লিজ , লিভ মি এলোন !’ বিরক্তিতে ঠোঁট কুচকাল সে । অরণ্য চুপচাপ প্রস্থানকরল । গিয়ে সেই আগের বেঞ্চিটাতে পুনরায় বসে পড়ল । মেয়েটি আবারো হারিয়ে গেলতার নির্জনতার সমুদ্রে । অরণ্যের ভেতরটা কেমন জানি মুচড়ে উঠল ।সেও নিজেকেআবিষ্কার করল , যেন রাতের আকাশে অজস্র তারার ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া নিষ্প্রাণকোন গ্রহ।

‘কি, আজকাল শুধু রাস্তাঘাটে মেয়েদের দিকেই তাকিয়ে থাকা হয়? হুম?’ ঋতুর আকস্মিক আগমনে চমকে উঠল অরণ্য । ‘তাতে তোমার কি যায় আসে ?’শান্ত গলায় বলল অরণ্য । ঋতু কোন উত্তর দিল না । চুপচাপ বসে পড়ল অরণ্যেরপাশে । দুজনেই চুপচাপ । এভাবে কেটে গেল অনেকক্ষণ । অরণ্য রাস্তার পাশে একাদাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে তখনো তাকিয়ে ছিল । ‘তোমার দেখছি ঐ মেয়েটির উপরথেকে চোখই সরছে না’ নিরবতা ভাঙ্গল ঋতু । ঋতুর কথায় বিরক্ত হল অরণ্য । ঠোঁটকুঁচকে বলল , ‘ সেটা নিয়ে তোমার মাথা ব্যথা না করলেও চলবে । কি জন্য ডেকেছোসেটাই বল’ । ‘তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হল তাই’ । ‘ আমাকে ? হা-হা-হা-’ একটাবিদ্রুপের হাসি খেলে গেল অরণ্যের চোখে মুখে । সূক্ষ্ম একটা দীর্ঘশ্বাস গোপনকরল ঋতু । ‘বারে আমার কি তোমাকে দেখার ইচ্ছে হতে পারে না ?’ ‘কিভাবে পারে?বুঝলাম না !’ অরণ্যের কণ্ঠে বিদ্রুপের স্পষ্ট ছাপ । ‘অবশ্য কি আর বুঝবতোমার কথা ! এতগুলো বছরের সম্পর্ক, সেখানে তোমাকেই বুঝতে পারলাম না কোনদিন’। ঋতু নিরুত্তাপ বসে । অরণ্য বলে গেল, ‘আমি তো তোমাকে ভালবাসতে চাইনি ,তুমিই ভালবাসিয়েছ ! আমি তো ব্রেকআপ করতে চাইনি তোমার সাথে , তুমিই করেছ !আমি তো তোমাকে ছেড়ে যেতে চাইনি কক্ষনো, তুমিই ছেড়ে গেছ ! হাহ্...’ ফোঁস করেএকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল অরণ্য । ঋতুর চোখ ছলছল করছিল । আর্দ্র কণ্ঠে বলল ,‘অরণ্য আমি তোমাকে কখনোই বুঝাতে পারব না । আমার জায়গায় তুমি হলে হয়ত বুঝতেপারতে’ । অরণ্য নিশ্চুপ বসে রইল । ওর আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না ।‘অনেকক্ষণ হয়ে গেল । আমি উঠব এখন’ । ‘তোমাকে তো আমি ডেকে আনিনি । তোমারইচ্ছেতে এসেছো , নিশ্চয় তোমার ইচ্ছেতেই যাবে’ । ঋতু উঠেদাঁড়াল । ‘আসি তবে’বলে ঘুরে দাঁড়াল । আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগল সে । ওর হাঁটা দ্রুত থেকেদ্রুততর হল । নিমেষেই হাজারো মানুষের ভীড়ে হারিয়ে গেল সে । অরণ্য ওর চলেযাওয়ার পথ ধরে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ।

এভাবে কতক্ষণ কেটে গেলঅরণ্য নিজেও জানে না । আস্তে আস্তে ঘোর কাটল ওর । মনে হল এতক্ষণ একটাদুঃস্বপ্ন দেখছিল ও । রাত বাড়ছে । বড্ড গরম পড়েছে আজ । ঘামে ভিজে শার্টটাগায়ের সাথে লেপ্টে গেছে একেবারে । এতক্ষণে ওর খবর হল । নাহ্ উঠা দরকার ।ক্লান্ত লাগছে খুব । হলে গিয়ে গোসল করে একটা ঘুম দেওয়া বড্ড প্রয়োজন । উঠেদাঁড়াল অরণ্য । সোডিয়াম আলোর পথ ধরে আপন মনে হাঁটতে লাগল ও ।অনেকদূর এগিয়েগিয়ে হঠাৎ মনে পড়ল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির কথা । একা একাদাঁড়িয়ে ছিল মেয়েটি । কে জানে ! মেয়েটি কি এখনো দাঁড়িয়ে আছে ? না কি চলেগেছে ?একবার ইচ্ছে হল- গিয়ে দেখে আসে । আবার পরক্ষণে ভাবল- ধূর গিয়ে কি হবে! শুধু শুধু মেয়েটা বিরক্ত হবে ওর উপর । আবারও হাঁটতে আরম্ভ করল অরণ্য ।

“দুই”

মালবিকাতখনো দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার পাশে । আবিরের সাথে ওর সম্পর্কের সবটুকু শেষ হয়েগেছে আজ সন্ধ্যায় । মালবিকা ভুলেও ভাবতে পারেনি ওর সাথে কখনো এমনটা হবে ।অসম্ভব ভালবাসত সে আবিরকে । তাই হয়ত ধাক্কাটাও লেগেছে বেশ জোরেসোরে । সামালদেওয়ার সাধ্য যেন ছিল না ওর ভিতর । সবটুকু শক্তি যেন নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল ।আবির যখন ওদের সম্পর্কের ইতি টানল তখন মনে হচ্ছিল ওর পায়ের নীচ থেকে কেযেন মাটিগুলো সরিয়ে ফেলছে । নিজেকে ভারসাম্যহীন লাগছিল । একটা কথাও বেরহয়নি ওর মুখ থেকে । আবির চলে যাওয়ার পর সেই যে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে তো আছেই ।ঘরে ফেরার কথাটাও যেন ভুলে বসে সে । ওকে এভাবে রাস্তার পাশে একা পেয়েচার-পাঁচটা ছেলে ওর চারপাশে ঘুরঘুর করতে লাগল । আশেপাশে লোকজন নেই বললেইচলে । ওরা কিছুক্ষণ পর ওকে লক্ষ্য করে শিষ দিয়ে গান গাইতে শুরু করল । গানেরশোরগোল কানে বাজতেই মালবিকা চমকে উঠল । ওর চেহারা হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেল ।ছানাবড়া চোখে হাতঘড়ির দিকে তাকাল । এগারটা বাজতে মাত্র তিন মিনিট বাকী ।ভয়ে শিউরে উঠল সে ।‘আপনি দেখি এখনো যাননি.....’ অরণ্যকে দেখে মালবিকা অবাকহল । ওদিকে ওকে মালবিকার কাছে এসে কথা বলতে দেখে ছেলেগুলো দূরে সরে গেল ।তা দেখে মালবিকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল । তবে কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না ।‘ দেখুন ঘাবড়াবেন না প্লিজ । আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে কোন কারণে আপনি ভেঙ্গেপড়েছেন খুব । কিন্তু এভাবে সারারাত কি রাস্তায় কাটিয়ে দিবেন ? বাসায় ফিরেযান । হয়ত আপনার জন্য বাসায় সবাই টেনশন করছে !’ বাসার কথা শুনে মালবিকাকেমন জানি চমকে উঠল । কাঁধে হাতটা চলে গেল আপনা আপনি । ‘আমার ব্যাগ ! হায়আল্লাহ্ !’ মাথায় হাত পড়ল ওর । ‘এখন কি হবে ? আমার মোবাইল-পার্স দু’টোইহ্যান্ডব্যাগে ছিল !’ আসন্ন বিপদের ভয়ে ওর চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে গেল । কপালেবিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করল । অরণ্য চিন্তায় পড়ে গেল । ওকে সান্তনাদেওয়ার ভঙ্গিতে বলল, ‘দুশ্চিন্তা করবেন না প্লীজ । এটা কোন ব্যাপারই না ।এমন ছোটখাট অ্যাক্সিডেন্ট হতেই পারে ।আচ্ছা এক কাজ করুন আমার মোবাইল থেকেবাসায় একটা ফোন করে দিন । ওহ শিট্‌ !’ জিভে কামড় খেল অরণ্য । ‘স্যরি আমারখেয়াল ছিল না । ব্যালেন্স জিরো !’ মালবিকা ড্যাব ড্যাব চোখে ওর দিকে তাকিয়েরইল । ও কিছুটা বিব্রত বোধ করল । গলা খাঁকারি দিয়ে বলল , ‘দেখুন যদিও আমিআপনার অপরিচিত কিন্তু এই মুহূর্তে আপনার আমার কথা শোনা উচিত ।  আমার মনে হয়না আপনার আর রাত করা ঠিক হবে । আপনার বাসা কোথায় বলুন তো ? আমি একটারিক্সা ডেকে দেই’ । ‘কিন্তু...’ ‘কিন্তু কি ? ওহ- নানা, আমি ভাড়া দিচ্ছি না। আপনি বাসায় গিয়ে ভাড়াটা দিয়ে দিবেন’ ভদ্রতাসূচক হাসি দিল অরণ্য ।মালবিকা ইতস্তত করতে লাগল, ‘না আসলে...’। ‘কি ? বলুল ? কোন প্রবলেম নেই।বলুন...’ । ‘আসলে আমার বাসা আজিমপুরে । সমস্যা হল শাপড়া মসজিদ থেকে একটুভিতরে গলি হয়ে ঢুকতে হয় । রিক্সা আমার বাসা পর্যন্ত যাবে না’ । ‘তাই নাকি ?তাহলে তো সমস্যা হয়ে গেল । কি করা যায় এখন...’ চিন্তায় পড়ে গেল অরণ্য ।মালবিকাও চুপ করে আছে । ও কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না । একজন অপরিচিতেরকাছে টাকা ধার চাইবে ? ছি ! ছি ! ব্যাপারটা কেমন বিশ্রী দেখায় ! কিন্তুছেলেটারও তো বুঝা উচিত । সে কেন টাকা ধার দেওয়ার কথা নিজ থেকে বলছে না ?কৌতূহলী চোখে তাকালো অরণ্যের দিকে। অরণ্যও বুঝতে পারল ব্যাপারটা । সে আমতাআমতা করে বলল , ‘কি বলব আসলে- লজ্জায় পড়ে গেলাম । আমার পকেটে বিশটা টাকাআছে মাত্র । এখান থেকে তো ভাড়া কমপক্ষে চল্লিশ হবেই’ । দু’জনেই এক বিব্রতকরঅবস্থায় পড়ল । অরণ্য এদিক ওদিক তাকাল । নাহ, পরিচিত কেউ চোখে পড়ছে না !রাত সোয়া এগারটা বাজে । চারপাশে মানুষজনের সংখ্যা কমে এসেছে । দেশেরপরিস্থিতি খুব একটা ভাল না এখন । বিরোধী দলগুলো ঘনঘন হরতাল ডাকে ইদানীং ।তাই আজকাল কেউ বাইরে খুব বেশি রাত করে না । বারটা বাজতেই পুলিশের টহল শুরুহবে । পুলিশগুলোও যা না ! সুযোগ পেলেই হয়রানি করে ছাড়ে । আরো ছেলেমেয়েথাকলে সমস্যা হতো না । এই মেয়েকে নিয়ে কি বিপদে না পড়া গেল ! কেন যে আবারআসতে গেল । হলে ফিরে গেলেই তো ভাল হতো । ধূর ! দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল অরণ্য ।ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বলে উঠল , ‘ আইডিয়া ! উপায় একটা পেয়েছি । কিন্তু...’।‘কিন্তু...?’ ‘আসলে আপনি কিভাবে নিবেন বুঝতে পারছিনা । কারণ আমি আপনারপরিচিত কেউ নই’ । মালবিকা প্রশ্নকাতুর চোখে তাকিয়ে রইল । ‘মানে আপনি যদিআমার উপর ভরসা করতে পারেন তাহলে আমার সাথে বক্সিরবীট সিগন্যাল পর্যন্ত চলুন। ফজলে রাব্বী হল চিনেন তো ? আমি ঐখানেই থাকি , ডিএমসি’র ছাত্র । তো ,আপনি যদি আমার হল পর্যন্ত সাথে আসতে পারেন তাহলে ওখান থেকে আপনাকে ব্যবস্থাকরে দিতে কোন সমস্যাই হবে না । কিন্তু ব্যাপারটা আপনি কিভাবে নিবেন বুঝতেপারছি না’ । মালবিকা চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে । মেডিকেলে পড়ে ?ডাক্তার ! দেখে তো মনে হয় না । এই বেটা আমাকে কোন ট্র্যাপে ফেলতে চাইছেনাতো ? শ’খানেক ভাবনার উদয় হল ওর অনু্র্বর মস্তিষ্কে । কিন্তু এত ভেবে কিহবে ! কোন রাস্তাই তো খোলা নেই ওর জন্য । ছেলেটাকে দেখে তো ভদ্র ঘরেরই মনেহয় । কিন্তু তারপরেও... ‘কি হল , এত কি ভাবছেন ? দেখুন আমি তো আপনাকেপ্রমাণ দিতে পারব না যে আমি ভরসা করার মত কেউ । তবে এটুকুই বলব আপনার মনযদি একটুও সায় দেয় তবে আমার সাথে চলুন । রাত বাড়ছে । জানেনই তো এখনপরিস্থিতি খুব একটা ভাল যাচ্ছে না। দেখছেন না চারপাশটা কেমন ফাঁকা হয়ে গেছেএত তাড়াতাড়ি । আমি একা হলে কথা ছিল না ।আপনাকে নিয়ে কখন কোন্ ঝামেলায় পড়িকোন ঠিক নেই’ । মালবিকা কিছুক্ষণ অরণ্যের মুখের দিকে নিষ্পলক চেয়ে রইল ।তারপর অনেকটা নিষ্প্রাণ কণ্ঠে বলল , ‘ চলুন ’ ।

তারপর পীচঢালা পথধরে দু’জনে হাঁটতে শুরু করল । মালবিকার মুখটা বিমর্ষ হয়ে আছে । তবে আগেরথেকে সে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক । ক্রমশ নিস্তব্ধ হয়ে আসছে চারপাশ । এদিকটারএলাকাটা একটু খালি খালি ধরণের । দুপাশে ঢাকা ভার্সিটির কোয়ার্টার আররোকেয়া হল ও জগন্নাথ হলের উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঢাকা । মাঝখান দিয়ে সুপ্রশস্তপীচের পথটা কিছুটা এঁকবেঁকে চলে গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে।দু’জনে চুপচাপ পাশাপাশি হেঁটে চলেছে । কারো মুখে কোন কথা নেই । মাঝে মাঝেদু’একটা রিক্সা আসছে যাচ্ছে টুংটাং বেল বাজিয়ে । রাতের অন্ধকারে বেলের সেইশব্দগুলো অনেকক্ষণ পর্যন্ত কানে বাজতে বাজতে দূরে মিলিয়ে যায় । হলুদসোডিয়াম আলোর পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে কেমন জানি একটা আবেশ সৃষ্টি হয় মনেরভেতর । তারপর সুনসান নীরবতা ।

অনেকটা পথ পেরিয়ে গেছে ওরা । এমন সময়বিকট দু’টো শব্দে চমকে উঠল দু’জনেই । মালবিকা ভয়ে অরণ্যের খুব কাছাকাছি চলেএল । ‘ কি হয়েছে ? ওটা কিসের শব্দ ?’ ‘বোধহয় কেউ ককটেল ফুটিয়েছে’ । ‘ককটেল !’ শিউরে উঠল মালবিকা । ‘আরে ভয় পাবেন না । পলিটিকেল ছেলেরা এমনহারহামেশা ককটেল ফুটায় । ওতে স্প্লিন্টার থাকে না । হাঁটতে থাকুন ’। একটুপরেই পেছন থেকে মোটর সাইকেলের শব্দ শোনা গেল ।মোটর সাইকেলটা সাইরেন বাজিয়েএকেবারে ওদের সামনে এসে থামল । দু’জনে ভয়ে আঁতকে উঠল ।অরণ্য যেটা নিয়ে ভয়পাচ্ছিল এতক্ষণ সেটাই হল । যথাসাধ্য স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল দু’জনে ।মোটর সাইকেলের আরোহী দুজনের একজন বাংলাদেশ পুলিশের  এসআই. এবং অন্যজনহাবিলদার । মোটর সাইকেল থেকে নেমে গম্ভীর মুখে বেঁটে গোছের পেট মোটা এসআই.সাহেব জিজ্ঞেস করলেন , ‘ কি ব্যাপার এই সময় কোত্থেকে আসছেন আপনারা ?’ অরণ্যভ্যাবাচেকা খেয়ে জবাব দিল , ‘টিউশনি থেকে ফিরছি’ । ‘কি- টিউশনি ? তাআপনারা দু’জন কি একসাথে জয়েন্ট ফার্মের মত টিউশনি করেন ?’ এসআই. সাহেবেরকথা শুনে হ্যাংলা পাতলা হাবিলদারটা বিশ্রী রকমের হেসে উঠল । অরণ্য না পারলমাথার চুল ছিঁড়তে । কেন যে টিউশনির কথা বলতে গেল ! এখন সবকিছু খুলে বলতেহবে । আর যত খুলে বলবে তত বানোয়াট ঠেকবে । উফ্‌ ! ‘কি হল ম্যাডাম, আপনিও কিটিউশনি করে ফিরছেন ?’ মালবিকা শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিল , ‘জী না’ । ‘তাহলে?’‘ঘুরতে এসেছিলাম’ । ‘ঘুরতে এসেছিলেন ? ইন্টারেস্টিং !’ আড়চোখে হাবিলদারেরদিকে তাকালো । ‘তা , আপনারা কি করেন ? বাসা কই ? আইডি কার্ড বের করেন’ ।অরণ্য আইডি কার্ড বের করল । এসআই. কার্ডটা হাতে নিয়ে বলল , ‘আই সি,ডিএমসিতে পড়েন ? কই ম্যাডাম আপনারটা দেখি ?’ ‘জী- আমার ব্যাগ হারিয়ে গেছে’ ।‘হারিয়ে গেছে ? দেখুন ,ম্যাডাম আমাদের সময় নষ্ট করবেন না । কি বলতে চানসাফ সাফ বলুন’ । মালবিকা বলতে ইতস্তত বোধ করল । অরণ্য তা দেখে আগ বাড়িয়েবলল , ‘দেখুন আমরা দুজনই ডিএমসিতে পড়ি । ও টিএসসি তে ঘুরতে এসেছিল । একটাদোকানে নাস্তা করে ফেরার সময় ব্যাগটা ফেলে আসে । পরে গিয়ে খোঁজ নিলে ওটা আরপাওয়া যায় না। ফেরার পথে আমার সাথে দেখা হল । তাই একসাথে ফিরছি’ । ‘ব্যাগহারিয়ে গেছে, তো থানায় জিডি করেছেন ?’ অরণ্য বিরক্তির সুরে বলল , ‘সামান্যএকটা ব্যাগের জন্য জিডি করতে যাব কেন ?’ এসআই. তখন চোখ লাল করে উত্তর দিল,‘জিডি কেন করবেন মানে কি মশাই ? ওতে উনার আইডি ছিল না ? ওনার নাম ভাঙ্গিয়েকেউ যদি অপরাধ করে তার দায়টা উনাকে নিতে হবে না ? আপনাদের কথাবার্তা তোসুবিধার ঠেকছে না মশাই । বুঝলাম আপনি ডিএমসিতে পড়েন , কিন্তু উনিও যে পড়েনতার প্রমাণ কি ? দুঃখিত, আপনাদের ছাড়তে পারছি না ।আমাদের সাথে থানায় যেতেহবে’ । ‘থানায় ?’ দুজনেই বিস্ফোরিত চোখে তাকাল । গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল ।ঠিক এমন সময় টানা তিন চারটে ককটেল বিস্ফোরণের প্রকাণ্ড শব্দ ভেসে এল ।হাবিলদার সাথে সাথে বলে উঠল, ‘স্যার শহীদ মিনারের ওদিকে’ । তাড়াতাড়ি দুজনেমোটর সাইকেলে উঠে বসল । হেলমেটটা মাথায় দিতে দিতে এসআই. বলল, ‘যান মশাই এযাত্রায় ছেড়ে দিলাম । এমন ভুল যেন আর করবেন না’ বলেই সাইরেন বাজাতে বাজাতেমোটর সাইকেল ছুটাল শহীদ মিনারের দিকে । অরণ্য আর মালবিকা এক মিনিটের জন্যপুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর দ্রুতপদে হাঁটতে লাগল দুজনে । কোনরকম শহীদমিনারে যাওয়ার রাস্তাটার মোড় পাড় হয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ওরা ।

ওরামাঝারি গতিতে হাটছিল । অনেকক্ষণ যাবত কারো মুখে কোন কথা নেই । অরণ্য গলাখাখারি দিয়ে কথা আরম্ভ করল । কিছুটা কৌতুকের সুরে বলল , ‘ বড় বাঁচা বেঁচেছিম্যাডাম ’ । এতক্ষণে মালবিকার মুখে হাসি ফুটল, ‘হুম- ইন্টারেস্টিং !’বলতেই দুজনে হো হো করে হেসে ফেলল । হাসি থামিয়ে অরণ্যবলল , ‘ভাল কথা ,আপনার নামটা কিন্তু এখনো জানা হল না’ । ‘হুম আপনার নামও’ । ‘আমি অরণ্য ।আপনি ?’ ‘জী, মালবিকা’ মালবিকা অরণ্যের চোখে চোখ রাখল । ‘ হুম, কি হল?ওভাবে তাকিয়ে আছেন যে ?’ ‘নাহ অপেক্ষা করছি নাম শুনে কি বলেন তা জানতে...’‘নামশুনে ? মানে ?’ ‘আবিরের সাথে আমার প্রথম যেদিন দেখা হয় আমার নাম শুনে ওকি বলেছিল জানেন ? বলেছিল আমার নামটা শুনে নাকি মনে হয়--’ থেমে গেলমালবিকা । চোখদু’টো হঠাৎ ছলছল করে উঠল । ‘থামলেন যে ? বলুন ?’ অরণ্য পিপাসুচোখে ওর দিকে তাকালো । এখনই যেন ব্যথার সমুদ্রের বড় বড় ঢেউগুলো আছড়ে পরবেওর চোখের কোণে । ‘ও বলেছিল আমার নামটা জপেই নাকি সহস্র বছর পার করে দেওয়াযায়’ বলে আর সামলাতে পারলনা নিজেকে । ডুকরে কেঁদে উঠল । দু’ হাতে মুখ চেপেধরে কুঁজো হয়ে বসে পড়ল রাস্তার মাঝেই । যেন বুকের ভেতর জমাট বাধাকষ্টগুলোকে কিছুতেই বেরুতে দেবে না, তাই আপ্রাণ চেষ্টা করছে ও । অরণ্যঅপ্রস্তুত হল । কি করা উচিত বুঝে উঠতে পারল না । ওর কান্নার শব্দ অদ্ভুত একসুর তুলে রাতের আঁধারটাকে যেন গ্রাস করে নিচ্ছে ক্রমশ । অরণ্যের বুঝতেবাকি রইল না মালবিকাও ওর মত পথ চলতে চলতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে ঠিকানাবিহীনকোন পথে । অরণ্য আকাশের দিকে মুখ করে তাকালো । শুন্য চোখে চেয়ে রইল অজস্রনক্ষত্রের পানে । শত শত বেদনা যেন আজ একাকার হয়ে সাজিয়ে দিয়েছে নক্ষত্রেরএই নগরীটাকে ।

“তিন”

‘আবার কি দেখা হবে ?’ রিক্সায়উঠার আগে মালবিকা শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল । ‘কেন ? তার কি কোন প্রয়োজনআছে ?’ নিরুত্তাপ উত্তর দিল অরণ্য । ‘আজ এতটা পথ আপনার পাশাপাশি হেঁটেছি ।আপনাকে চিনি না , জানি না । অথচ কেন জানি খুবপরিচিত মনে হচ্ছে আপনাকে । শেষমুহূর্তে এসে কেন জানি মনে হচ্ছিল আজকের রাতটা যদি আর শেষ না হতো ! এভাবেযদি হেঁটে যেতে পারতাম সারাটা জীবন । এমন কোন পথে যে পথ আজকের মতক্লান্তিহীন । যে পথ কখনো ফুরাবার নয় । কে জানে এমন দুঃখের আর এমন সান্তনাররাত আমার জীবনে আর কখনো আসবে কিনা । হা-হা- কি নির্লজ্জের মত বকে যাচ্ছিঅনবরত’ । মালবিকার চোখ দু’টো জ্বলজ্বল করে উঠল । অরণ্য একটা দীর্ঘশ্বাসছেড়ে বলল , ‘দেখুন ভালোবাসায় যে বিশ্বাস ও শক্তি তাতে এক ধরণের অহমেরসৃষ্টি হয় । সে অহম ভেঙ্গে যাওয়া মানে নিজের কাছে নিজে হেরে যাওয়া । একবারহেরেছি। তাই আর নতুন করে পথ চলার সাহস আমার নেই’ । মালবিকা স্মিত হাস্যেবলল ,‘একটা সময় আমারও তাই মনে হয়ে ছিল । কিন্তু অবশেষে মনে হল যে ভালবাসতেজানে তার কোন হার নেই । যে ভালবাসতে জানে না সেই পরাজিত । ভালবাসা মানে অহমনয় , ভালবাসা মানে বিনয় । ভালবাসা মানে নতুন করে পথ চলার শক্তি । কখন যেআমরা পথ চলতে চলতে  সেই শক্তি অর্জন করি আমরা নিজেরাও জানি না ’ মালবিকারকণ্ঠটা ক্ষণিকের জন্য কেঁপে কেঁপে উঠল । অরণ্য নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইল ।মালবিকা রিক্সায় উঠে বসল । ‘আজকের রাতটার কথা আমি কখনো ভুলব না । ভালথাকবেন ।’ রিক্সা ঘুরাতেই মালবিকার সমুদ্রের মত গভীর চোখ দু’টো অরণ্যেরচোখের সামনে থেকে নিমেষেই হারিয়ে গেল । অরণ্য চোখ বুজে তার ঐ চোখ দু’টোখুঁজতে লাগল । ওর ভেতরটা নড়েচড়ে উঠল হঠাৎ । ওর মনে হল ক্রমশ সে নিজেকেহারিয়ে ফেলছে অন্ধকারের গভীর অরণ্যে। চোখ খুলতেই আবিষ্কার করল রিক্সাটাঅনেকদূর চলে গেছে । কোনকিছু চিন্তা না করেই হঠাৎ ছুটতে শুরু করল রিক্সারপিছুপিছু , সাথে চিৎকার জুড়ে দিল রিক্সা থামাতে । আশেপাশে পথচারী লোকগুলোহা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে । ওর চিৎকার শুনে মালবিকা রিক্সাওয়ালাকে রিক্সাথামাতে বলল । মালবিকা উৎসুক হয়ে উঁচুস্বরে জিজ্ঞেস করল , ‘কি হয়েছে ?পাগলের মত ছুটছেন কেন ?’ অরণ্য রিক্সার কাছে পৌঁছে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল ,‘একটা কথা বলতে ভুলে গেছি’ । ওর চোখে মুখে কৌতুকের স্পষ্ট ছাপ । ‘ কি কথা ?’‘আমার টাকাটা ফেরত দিতে আসছেন কবে ?’ দুজনের ঠোঁটে প্রাণোচ্ছল এক হাসিফুটে উঠল যেখানে লুকিয়ে আছে প্রাণের শত স্পন্দন ।হাস্যোৎজল মুখে মালবিকাবলল , ‘ এত তাড়াহুড়োর কি আছে ? আসবনে একদিন আপনার ক্যাম্পাসে । এখন যাই ।ভাল থাকবেন ততদিন ’। ‘আপনিও ভাল থাকবেন । খোদা হাফেজ’ । অতঃপর রিক্সা চলতেশুরু করল ।



উৎসর্গ : ভগ্ন হৃদয়ের সকল মানুষ গুলোকে ।

       “ভালবাসা তব উঠোন জুড়িয়া

       ফিরিয়া দেখ হে পিছু ,

       সবটুকু ওরে আপনি আসে না

       কুড়াইতে হয় কিছু ।”