Sunday 15 March 2015

ধূর্ত শেয়াল ও মরা হাঁতির গল্প

একটা জঙ্গলে একটা শেয়াল থাকতো, সে খুবই চালাক ছিল কিন্তু সে বুড়ো হয়ে যাওয়ার জন্য বেশি কাজ করতে পারতো না। কাজ বলতে তো একটাই, শিকার করে খাবার জোগাড় করা। শিকার  করতে না পারলে খাবার তো আর আপনা আপনি তার কাছে আসবে না। তাই বুড়ো হওয়া সত্তেও তাকে কোন রকমে নিজেকেই খাবার জোগাড় করতে হত। কোন কোন দিন খাবার জুটত আবার কোন দিন আধপেটা খেয়ে বা না খেয়ে থাকতে হতো। এভাবেই সেই বুড়ো শেয়ালের দিন কাটছিল। একদিন জঙ্গলে ঘুরতে
একটা মরা হাঁতিকে দেখতে পেল। হাতিটা মরে পড়ে আছে। সেটাকে দেখে তার খুবই আনন্দ হল, আজকে পেটভরে খেতে পাবে। কিন্তু এক কামড় দিয়েই বুঝে গেল, হাতির চামড়া এতোই শক্ত যে তার পক্ষে সেটা ছিড়ে ভেতরের নরম মাংস খাওয়া সম্ভব নয়। সেই সময় সেখান থেকে পার হচ্ছিল একটা সিংহ। সিংহ বনের রাজা সে যদি হাতির মাংসটা খায় তাহলে, তাকে তোসামোদ করলে কিছু মাংস পাওয়া যেতে পারে এই আসায়, সে সিংহের সামনে গিয়ে বলল – প্রনাম হই মহারাজ, আসুন এই হাতির মাংসটা খান, দেখুন এর স্বাদ কিরকমের সুস্বাদু।
সিংহ দ্বম্ভ ভরে জানালো – আমি বনের রাজা, আমি মরা হাতির মাংস খাবো। হাঁসালে হে শেয়াল, আমি টাটকা তাজা মাংস খাই সব সময়।
শিয়াল ভয়ে ভয়ে বলল – তাই তো, তাই তো, তা না হলে আর বনের রাজা কাকে বলে।
সিংহ খুশি হয়ে সেখান থেকে চলে গেল। শেয়াল ভাবতে থাকলো কি করি করি। আবার সেই পথে একটা বাঘ আসছে, বাঘ যদি এই মরা হাঁতি দেখতে পায় তাহলে পুরোটাই খেয়ে ফেলবে, একটুও তাকে দেবে না। ভেবেই সে হাতিটার পিঠের উপর চড়ে বসল। হাঁতির মাংসটা এর হাত থেকে বাঁচাতে হবে। বাঘ সামনে এসে শিয়ালকে দেখে জিঞ্জেস করলো – কি করছিস এখানে, আর এই মরা হাঁতিটার উপর চেপে কি করছিস, সর আমি এটাকে এখন খাব।
শিয়াল – সে তুমি খেতেই পার আমি তোমার সাথে লড়ায়ে পারবো না, তবে মহারাজ সিংহ আমাকে এটার পাহারায় রেখে গেছেন, এটা তাঁর শিকার , মহারাজকে তোমায় জবাব দিতে হবে, এটাকে খেলে।
সিংহের শিকারে হাত বসানো ঠিক হবে না, বনের রাজার শিকারে থাবা বসালে প্রানটাও না থাকতে পারে। তাই এখাব থেকে সরে পড়াই ভালো ভেবে, মুখে বলল- ঠিক আছে ঠিক আছে আগে বলবি তো, এটা মহারাজের শিকার, তাহলে এসব কথাই উঠতো না। বলেই চুপিসারে সেখান থেকে সরে পড়লো।
আবার কিছু পরে সেইপথ দিয়ে পার হচ্ছিল একটা হায়না। সেও একই ভাবে হাঁতির মাংস খেতে চাইল। হাতির চামড়া শেয়াল নিজে ছিড়তে পারবে না, এই হায়নাকে দিয়েই নিজের কাজ হাসিল করতে হবে। সে হায়নাকে জানালো এটা মহারাজ সিংহের শিকার, মহারাজ তাকে পাহারাতে রেখে গেছে, এটা খেলে মহারাজ তাকে ছাড়বে না। হায়নাও সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল, তখন শেয়াল তাকে বলল- দাঁড়াও তুমি বন্ধু মানুষ, তার উপর তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে, এক কাজ করো, আমি পাহার দিচ্ছি রাজামশায় এদিকে আসছে কি না। উনি এদিকে এলেই তোমাকে জানিয়ে দেবো, তুমি পালিয়ে যাবে উনি আসার আগেই। হায়না  তাতেই রাজি। সে হাতির চামড়া ছিঁড়ে হাতির মাংস একটু খেয়েছে আর তখন শেয়াল বলতে সুরু করে দিল, সিংহ আসছে, পালাও পালাও। হায়নাও সিংহের ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেল। তারপরে শেয়াল আরামে হাঁতির ভেতরের নরম মাংস মহানন্দে খেতে থাকলো। শেষে কিছুটা নিজের সাথেও নিয়ে গেলো যতটা সে নিয়ে যেতে পারনো।
নীতিকথাঃ বুদ্ধি থাকলে অন্যকে দিয়েই নিজের কাজ করানো যায়।