Wednesday 19 November 2014

জ্বিনদের জানাযায় - একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে ছোট গল্প

হাসান বেগ একজন সরকারী কর্মকর্তা। ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের একজন পরিদর্শক। মাসিক মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে থানা স্বাস্থ্য অফিসে এসেছেন। মিটিং শুরু হতে হতে দুপুর পার হয়ে গেলো। হাসান সাহেব কর্মকর্তাদের আচরণে খুব বিরক্ত। সময় জ্ঞান নেই মনে মনে বিরবির করে বললো। আসলে হাসান সাহেবরই বা কি দোষ। থানা সদর থেকে প্রায় ২১ কি.মি. দূরে হাসান সাহেবের বাড়ি। যদিওবা বাসে সবটা রাস্তা যাওয়া যেতো তাহলও সমস্যা ছিলোনা। কিন্তু ৭ কি.মি. বাসে আর বাকিটা পথ সাইকেলে যেতে হবে।
তাই সন্ধা হবার আগে যত তারাতারি সম্ভব রওনা হওয়া যায় ততই ভালো। কিন্তু কি দুর্ভাগ্য মিটিং শেষ হলো মাগরিবেরও প্রায় ১ ঘন্টা পর। হাসান সাহেব পড়িমরি করে বের হতে যাবে এমন সময় থানার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক দিলেন। প্রচন্ড বিরক্তবোধ করলেও হাসান সাহেব যতটুকু সম্ভব মুখে হাসি রেখে ঘুরে দাঁড়ালেন। থানা কর্মকর্তা ইশারায় তার রুমে যাওয়ার জন্য বললো। হাসান সাহেব পিছু পিছু রুমে যেতেই কর্মকর্তা তাকে বসতে বললেন। প্রায় দেড় ঘন্টা বিভিন্নরকম কথা-বার্তা বলে হাসান সাহেবকে বিদায় দিলেন।

বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখে কোন বাসই নেই। ঘড়িতে তখন ৯ টা ছুঁই ছুঁই। মফস্বল শহরগুলোতে এটা একটা সমস্যা। ৮ টার পরে কোন বাসই ছাড়তে চায়না। মোটামুটি ৮/১০ জন লোক এক জায়গায় জড়ো হয়েছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু কোন যানবহন না পেলেতো সমস্যা। এমন সময় একটি ট্যাম্পু এগিয়ে আসলো। এই লোকগুলিকে একটি নির্দিষ্ট গন্তব্য পর্যন্ত ডাবল ভাড়ায় পৌছে দিতে রাজী হলো।

টেম্পুতে বসে হাসান সাহেব খুবই দুশ্চিন্তা করতে লাগলো। এই পথটা না হয় টেম্পুতে সবার সাথে চলে যাওয়া যাবে। বাকি পথটুকু কেমনে একা একা যাবে। গ্রামের দিকেতো ৮ টা বাজতেই ভূতুরে নিরবতা সৃষ্টি হয়ে যায়। হাসান সাহেব মনে মনে কিছুটা ভয় পেতে লাগলো।

হাসান সাহেব টেম্পু থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে নেমে কোনার চা-পানের দোকানটার দিকে পা বাড়ালো। হাসান সাহেব থানা সদরে আসলে উনার সাইকেলটা কোনার ঐ চা-পানের দোকানে রেখে যায়। দোকানদার হেকমত আলী খুবই সজ্জন ব্যাক্তি। যে কেউ উনার দোকানের কাছে সাইকেল, রিক্সা রেখে যায়। উনি দোকানের পাশাপাশি এগুলোও নজড় রাখে। বিনিময়ে কারো কাছ থেকে কিছু নেয়না। সবাই উনার দোকানে চা-পান খেয়ে যায়। এই যা.....। হাসান সাহেবকে দেখে হেকমত আলী দেরী হওয়ার কারন জিজ্ঞাসা করলো। হাসান সাহেব কারন বলতেই পাশে দোকানের সামনের বেন্চিতে বসা একটি লোক বলে উঠলো সরকারী উধ্বস্তন কর্মকর্তাদের সময় জ্ঞান বলে কিছু নেই। হাসান সাহেবও সায় জানালো।

চার কাপে চিনি, দুধ দিতে দিতে হেকমত আলী বার কয়েকবার হাসান সাহেবকে আজ রাতে থেকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলো। হাসান সাহেব বেশী রাত হওয়াতে ভয় পেলেও বললো নারে ভাই থাকা যাবে না। বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানরা দুশ্চিন্তা করবে। হেকমত আলীও মেনে নিলো। তখনতো আর মোবাইলের কোন ব্যাপার-স্যাপার ছিলোনা।

হাসান সাহেব একটি পান মুখে দিয়ে সাইকেল নিয়ে রওনা হলো গ্রামের উদ্দেশ্যে। আকাশে চাঁদ দেখে হাসান সাহেব খুবই খুশী হলো। যাক চাদেঁর আলোয় ভালোভাবে যাওয়া যাবে। গ্রামের নির্জন রাস্তা। গাছের ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলোয় অদ্ভুধ এক আলো-আধাঁরের মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছে রাস্তায়। পথ যেতে যেতে হাসান সাহেব একটা অদ্ভুধ একটা জিনিস আবিষ্কার করলো। রাতের বেলা গাছের নিচে একটু ভাপঁসা গরম ভাব থাকে। ডানের মোড়ের জঙ্গলটায় হঠাৎ রুপালী একটা আভা চোখে পড়লো। হাসান সাহেব কি কিছুটা চমকিত! সাইকেলের বেল দিতে দিতে হাসান সাহেব ডানের মোড়টা ঘুরলো। হাসান সাহেব মনে মনে একটু হাসলো। ডানের মোড়ে আসলে একটা বড় পুকুর আছে যেটায় চাদেঁর আলো পড়ে রুপালী একটা আভা তৈরী করেছে। পুকুরের মাঝখানে একটা সাদা হাঁস একলা ভাসছে।

সামনেই কর্ফুলা গোরস্থান। হাসান সাহেব আবার গোরস্থানকে ভয় পায়না। যদিও এ গোরস্থান নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে।

হাসান সাহেব আবার সাইকেলে বেল বাজাচ্ছে। রাস্তায় কেউ নেই তবুও হাসান সাহেব সাইকেলে ইচ্ছে করে বেল বাজাচ্ছে। গোরস্থানের মাঝখানের তেতুঁলগাছটা দেখা যাচ্ছে। কিছু মানুষের ফিসঁফাঁস কথা শোনা যাচ্ছে। হাসান সাহেব লক্ষ্য করলো গোরস্থানটার শেষ দিকে কিছু মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে একটা লাশ। হাসান সাহেব ভাবলো কেউ হয়তো মারা গেছে সেটার জানাযা হচ্ছে। হাসান সাহেব সাইকেলটাকে রাস্তায় একটা গাছে হেলান দিয়ে জানাযায় শরীক হলো। আসসালামু ওয়ালাইকুম বলে বাম দিকে তাকাতেই দেখলো আশে পাশে কেউ নাই। শুধু সামনে লাশটা পড়ে আছে। হাসান সাহেব ঢলে পড়লো।