Sunday 31 August 2014

একটি ব্যাখ্যাতিত ঘটনা

অবশেষে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তীব্র যানজট পেরিয়ে যখন বারাদী বাজার (মেহেরপুর) এসে নামলাম তখন রাত ১.৫০ মিনিট। অন্ধকার তেন ছিলো না, মৃদু চাঁদের আলোয় ঝিঁঝি পোকারা ডাকছিলো। বাজারে একটা দোকানও খোলা নেই। আমি খুব ধীরে ধীরে ট্রাভেল ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। এই মুহূর্তে আমি চূড়ান্ত রকম নিঃসঙ্গ। মোবাইলটা তিনবার 'লো-ব্যাটারি' সিগন্যাল দিয়ে বন্ধ হয়ে গেল।
ভালো লাগাটা আরো বেড়ে গেল এটা ভেবে যে, এই মুহূর্ত হতে আমি ডিজিটাল জগৎ হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। আমি যখন চৌগাছার মোড়ে মসজিদের সামনে এসে পৌঁছলাম তখন সকল ভালো লাগা ভয়ে রূপান্তরিত হলো। ভয়ালদর্শন তিন চারটা কুকুর আমাকে ঘিরে ফেললো, অনবরত ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো। আমি প্রচ- ঘাবড়ে গেলাম। স্থির হয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। সবচেয়ে অবাক করা ঘটনাটা ঘটলো এরপর। সবকয়টা কুকুর আমাকে ছেড়ে প্রাণপণে উল্টো দিকে দৌড়াতে লাগলো। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আবার হাঁটা শুরম্ন করলাম। হাঁটতে হাঁটতে যখন সরম খালের ওপর পাকা ব্রিজটাতে এসে দাঁড়ালাম তখন খেয়াল করলাম অনেক্ষন যাবৎ একটা কুকুর আমার আগে আগে হাঁটছে। খুব ভালো করে লৰ্য করলাম আমি যখন থেমে যাচ্ছি কুকুরটিও থেমে যাচ্ছে। মলবাড়ির সামনে আসা মাত্র আবারও তিন কুকুরের আক্রমণ ও একইভাবে পলায়ন আমকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুললো। এক পর্যায়ে রাসত্মার এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়ালাম যেখানে রাসত্মা দুদিকে ভাগ হয়ে গেছে। ডান দিকের পথ গিয়েছে আমাদের গ্রামে আর বামে শানত্মিপুর গ্রামের পথ। আমি ইচ্ছে করে ডান দিকের পথে না যেয়ে বাম দিকের পথে হাঁটা শুরম্ন করলাম। ইতোমধ্যে কুকুরটা আমাদের গ্রামের পথে হাঁটা শুরম্ন করে দিয়েছে। আমাকে অন্য পথে যেতে দেখে সে থমকে দাঁড়ালো। আমার ভেতর ভয়টা দ্বিগুণ হয়ে গেল। এবার আমি গ্রামের পথে হাঁটা শুরম্ন করলাম। কুকুরটাও চলা শুরম্ন করলো। অবশেষে হাঁটতে হাঁটতে যখন আমি আমাদের বাড়ির দরজার প্রায় ৬-৭ মিটার দূরে তখন দেখি হঠাৎ কুকুরটা আমাদের বাড়ির দরজায় থমকে দাঁড়ালো বাড়ির গেটের সামনে যখন পেঁৗছলাম তখন প্রথম বারের মতো কুকুরটার খুব কাছাকাছি এলাম। যখনই হাত দিয়ে ধরতে গেলাম গড় গড় একটা শব্দ করে দূরে সরে গেল। আমি কলিং বেল চেপে কুকুরটার দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম। কুকুরটা নেই! মাত্র ৩-৪ সেকেন্ডের ভিতর কুকুরটা অদৃশ্য হলো কিভাবে, যেখানে পাশের ঝোপ-ঝাড়ে যেতেও কমপৰে ২০ সেকেন্ড লাগবে। সেদিনের মতো বাড়িতে গেলাম, কিন্তু ২টা প্রশ্নের উত্তর এখনও পেলাম না। প্রথমত কুকুরটাকে দেখে অন্য কুকুররা এভাবে পালিয়ে গেল কেন? দ্বিতীয়ত, আমি যে পথে যাবো সে পথ কুকুরটা জানতো কিভাবে? অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি সেদিন কুকুরটা আমার সাথে প্রায় ৪.৫ কি.মি. পথ এসেছিলো। এটা কি শুধুই কুকুরের প্রভুভক্তির উদাহরণ নাকি অন্য কিছু।

লেখকঃ তৈমুর শেখ